ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে উত্তরায় গার্ডার পড়ে নিহত রুবেলের দাফন সম্পন্ন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১৭ আগস্ট ২০২২

মেহেরপুরে উত্তরায় গার্ডার পড়ে নিহত রুবেলের দাফন সম্পন্ন

রুবেলের মরদেহটি দেখার জন্য স্বজনদের ভিড়

সোমবার বিকালে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বিআরটিএর প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের জন নিহত হন। এর মধ্যে নূর ইসলাম রুবেল ওরফে আযুব হোসেন হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মৃত তারা চাঁদ মন্ডলের ছেলে।

রুবেলের মৃত্যুর খবর তার নিজ গ্রামে এসে পৌছালে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠে। রুবেলের মরদেহটি একনজর দেখার জন্য আশেপাশের গ্রাম থেকে স্বজনরা ভিড় জমায় তার পৈতৃক ভিটায়। কিন্তু নিজ গ্রামে  লাশ নিয়ে আশা নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংশয়। রাজধানী ঢাকায় রুবেলকে স্বামী হিসেবে দাবি করেন কয়েক জন। তার একাধিক স্ত্রী রয়েছে বলেও জানা যায়। তবে নিহতদের মধ্যে রুবেলের মরদেহ গ্রহণ নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তার সমাধান হওয়ার পর শাহিদা রেহানা নামের দুই স্থীর দায়িত্বে রুবেলের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে জানাজার পর মঙ্গলবার দিনগত রাতে তার লাশ এসে পৌছায় নিজ পৈতৃক ভিটায়। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এমন দূর্ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে নিহতদের স্বজনসহ এলাকাবাসির মাঝে।

স্বজনদের আহাজারি

জীবিকার তাড়নায় ২২ বছর আগে জন্মভূমি মেহেরপুর ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান নূর ইসলাম রুবেল ওরফে আযুব হোসেন। সেখানে বিভিন্ন গার্মেন্টেসে চাকরি করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে শুরু করেন ব্যবসা। তার নাম রুবেল হলেও এলাকায় তাকে আয়ুব হোসেন নামে চিনেন তার স্বজন প্রতিবেশীরা।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার হেমায়েতপুরে বিয়ে করায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্যবসার কাজের জন্য ঢাকার খিলখেতে একটি বাসাতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন তিনি।

গেল শনিবার একমাত্র ছেলে হৃদয়ের বিয়ে দেন জামালপুরে। সোমবার ছিলো বৌভাতের অনুষ্ঠান। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে ছেলে, ছেলের বউ তাঁর পরিবারের লোকজনকে নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে রাখতে যাচ্ছিলেন জামালপুরে। এর মধ্যে উত্তরায় ঘটে মর্মান্তিক দুঘটনা। তিনিসহ প্রাণ হারান জন।

এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় জনের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

রুবেলের বড় ভাই মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মহাসিন আলী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে রুবেল ঢাকায় যায়। তারপর থেকে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কখনো গামেন্টেসে চাকরি করেছে আবার কখনো গার্মেন্টসের সাথে ব্যবসা করেছে। মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে দু এক দিন করে বেড়িয়ে যেতো। দিন পনের আগেও সে গ্রামে এসে ঘুরে গেছে।

তার আরেক ভাই আসলাম হোসেন বলেন, এই ঘটনাটি অত্যান্ত দু:খজনক। আনন্দের মধ্যে লাশ হয়ে ফিরতে হলো ভাইকে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি তার পরিবার।

প্রতিবেশী শাহ আলম জানান, অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলো আয়ুব হোসেন। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্মরত শ্রমিকদের অবহেলার কারণেই এমন দূর্ঘটনা ঘটেছে। আর তাদের ভূলের মাসুলে ঝরে গেল বেশ কয়েকটি তাজা প্রাণ। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তারা।

 

 

টিএস

×