
সার
বগুড়ায় সার ব্যবসা নিয়ে গড়ে উঠছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চলতি মৌসুম ঘিরে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বেড়েছে। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বগুড়াসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার সারের বাজার। অধিক মুনাফার জন্য কালোবাজারে সার বিক্রির জন্য তারা ব্যবহার করছে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া সার ডিলারদের বরাদ্দপত্র।
বগুড়ার এই সিন্ডিকেটের একজন ডিলারই সার উত্তোলন করেন প্রায় ৬০ জন ডিলারের বিপরীতে আসা বরাদ্দের সব সার। পরে তা চলে যায় কালোবাজারে। সব মিলিয়ে বগুড়ার প্রায় একশ ডিলার অর্থাৎ প্রায় ৬০
শতাংশের বেশির ডিলার সরাসরি সারের ব্যবসা না করেই শুধু বরাদ্দপত্র বেঁচে কালোবাজার সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। আর এটি চলছে বছরের পর বছর। কালোবাজারি সার ব্যবসায়ীদের নাম মাঝে মাঝে আসলেও থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সিন্ডিকেটে জড়িত সার ডিলাররা বলছেন, তারা কালোবাজারে সার বিক্রি করেন না। অন্য ব্যবসায়ীদের সার বাফার গুদাম থেকে উত্তোলন, পরিবহন এবং কিনে নিয়ে সহায়তা করেন মাত্র।
বগুড়ার সার ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কার্যক্রম বছরের পর বছর চলছে। ইতোপুর্বে আসাধু সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শুধু সিন্ডিকেডের সদস্যর নামের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। কখনও বা সাময়িক স্থিমিত হয়েছে তাদের কার্যক্রম। পরিস্থিতি শান্ত হলেই তারা ফিরে গেছেন তাদের অবস্থানে। এবার সারের দাম তারতম্য নিয়ে এই চক্র আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। গড়ে তুলতে থাকে সারের অবৈধ মজুদ।
গত ৭ আগস্ট রাতে বগুড়ার সদরের এরুলিয়া বাজার এলাকায় মঞ্জু করিম ট্রেডার্স নামের সার ব্যবসায়ীর গুদামে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল। সেখানে অবৈধ মজুদ করে রাখা ১২ থেকে ১৫ হাজার বস্তা ইউরিয়া ও ডিএপি সার পাওয়ার পর তা সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমান আদালত।
অভিযানের সময় ইউএনও জানান, তারা শুনেছেন গুদামের সারের মালিক নাজমুল পারভেজ কনক এবং এটি সম্পুর্ণ অবৈধ ও কালোবাজরের সার। আর কনক নামে সদরের কোন সার ডিলার নেই। পরের দিন একই স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ওই গুদামের ম্যানেজার আজিজুল হক সাজুকে আটক করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। গুদামটি বর্তমানে সিলগালা করে রাখা রয়েছে। এই সার এখন নিলামে বিক্রির
প্রক্রিয়া চলছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বগুড়ায় মোট সার ডিলার ৩৯৬ জন। এর মধ্যে বিসিআইসির ডিলার রয়েছেন ১৬৩ জন। বিএডিসি’র ২৩৩ জন। বিসিআইসি ইউরিয়া এবং ডিএপি সার এবং বিএডিসি নন ইউরিয়া
সার ডিলারদের বিক্রি করে।
সূত্র জানায়, বিসিআইসি’র ডিলার ইউনিয়ন প্রতি একজন করে থাকার কথা থাকলে বিভিন্ন কারণে এর সংখ্যা বেড়েছে। আর মধ্যে অন্যতম কারণ রাজনৈতিক সংশ্লিস্টতা।
সূত্র আরও জানায়, ১৯৯৬ সাল থেকে মোট তিন দফায় সার ডিলার নিয়োগ হলেও এর বাইরে আর্থিক ও
রাজিনৈতিক প্রভাবে আরো কিছু সার ডিলার নিয়োগ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জ ও গাবতলিতে প্রায় পুরোটাই বিএনপি’র সময় তারেক রহমান ডিলার নিয়োগ দেন। ডিলারদের মধ্যে বেশির ভাগই রাজনৈতিক ব্যক্তি। এর মধ্যে সাবেক এমপি থেকে বিশিষ্ট শিল্পপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, চেম্বার অব কর্মাসের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।
বগুড়া ফার্টিলাইজার এ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রথম দফায় যখন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয় তখন ইউনিয়ন বা এলাকার ডিলার থাকার কোনো কারণ ছিলো না। পরবর্তীতে ওই নিয়ম করা হয়।
সুত্র জানায়, একই ব্যক্তির পরিবারে ভিন্ন ভিন্ন নামে ৪/৫টি পর্যন্ত সারের ডিলার রয়েছে। তবে বগুড়ায় সারের সিন্ডিকেটের বিষয়ে ফার্চিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তার কোনোকিছু জানা নেই।