
উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পানি
কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ ভবন, ইউএনও’র অফিস ও বাসভবনসহ ১৪ গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষখালী নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট বৃদ্ধি পায়। স্থানীয়রা জানান, পূর্ণিমার কারণে এ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষখালী নদীর তীরবর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলাজুড়ে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এসব অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ৫০ বছরেও বিষখালী নদীর কাঁঠালিয়া অংশে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবন, আউরা আশ্রয়ণ ও মধ্যশৌলজালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারী ঘর, কাঁঠালিয়া গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কাঁঠালিয়া সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, আউরা, কাঁঠালিয়া, চিংড়াখালী, জয়খালী, মশাবুনিয়া, পর্যটন কেন্দ্র, ছৈলার চর, কচুয়া, শৌলজালিয়া, রঘুয়ারদরি চর, জাঙ্গালিয়াসহ ১৪টি গ্রাম প্লাবিত। এ সকল এলাকার কৃষি, মৎস্য ও গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ডুবল খাতুনগঞ্জ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, আষাঢ়ের বৃষ্টি নয়, জোয়ারের পানিতেই ডুবে গেল চট্টগ্রাম মহানগরীর বাণিজ্যপাড়া খাতুনগঞ্জ। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অবস্থা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ী এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
বর্ষাকাল হলেও আষাঢ় কেটে গেল প্রায় বৃষ্টিহীন। কিন্তু জোয়ার ভাটার শহর চট্টগ্রামে যে বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। দিনে দু’বার জোয়ার হয়। পূর্ণিমা তিথিতে সেই জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আর এতে করে বৃহস্পতিবার ডুবেছে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আসাদগঞ্জ ও বাকলিয়ার নিচু এলাকা। এদিন মহানগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে যায়। ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারের পানি ঢুকেছে বিভিন্ন আড়ত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এর ফলে ফ্লোরে থাকা পণ্য বিনষ্ট হয়েছে। এলাকার বাড়িগুলোর নিচতলায় হাঁটু পানি।
সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। শুধু এবার নয়, জোয়ারের পানিজনিত ভোগান্তি এখানে যেন স্বাভাবিক চিত্র। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন জানান, শুধু বৃষ্টিতেই ডোবে এমন নয়, জোয়ারের ফলেও হাঁটু পানি হয় গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্যপাড়ায়। দোকান এবং আড়তগুলোতে রাখা নিচের সারির পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার এত বেশি পানি উঠেছে যে, অতীতে এমন দেখা যায়নি। ওই এলাকার বাসিন্দারা ঘরে বন্দী হয়ে পড়ে।
বাগেরহাটে সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ সেতু সংলগ্ন কেশবপুর রাস্তার অংশবিশেষ ও কালভার্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে। বুধবার রাতে ভৈরব নদীর পানির চাপে কালভার্ট ও দুই পাশের প্রায় ২০ ফুট রাস্তা ভেঙ্গে যায়। এদিকে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় বাগেরহাট শহরের সঙ্গে মুনিগঞ্জঘাট, চরগ্রাম, কেশবপুর, সুলতানপুর, ভদ্রপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার যোগাযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছে।
মোরেলগঞ্জে ভেসে গেছে ঘের
সংবাদদাতা মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট থেকে জানান, পৌর শহরসহ প্লাবিত হয়েছে ২০টি গ্রাম। দুই শতাধিক মৎস্য ঘেরে প্রবেশ করেছে পানি। ভেঙ্গে গেছে কাঁচাপাকা রাস্তা। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহরের কাপুড়িয়াপট্টি সড়ক, কাঁচাবাজার, কেজি স্কুল সড়ক, ফেরিঘাট সংলগ্ন কালাচাদ মাজার এলাকা, সানকিভাঙ্গা, বারইখালী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রান্না হচ্ছে না অনেক বাড়িতে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরিক্ত জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ মৎস্য ঘেরগুলোর খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করার জন্য মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাউফলে ২৫ গ্রাম প্লাবিত
নিজস্ব সংবাদদাতা বাউফল, পটুয়াখালী থেকে জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে কেশবপুরের বাতামতলি, মমিনপুর, জাফরাবাদ, ধুলিয়ার মঠবাড়িয়া, নাজিরপুরের নিমদি, ধানদি, বড়ডালিমা, কচুয়া, কাছিপাড়া, কারখানা ও চন্দ্রদ্বীপের ১১টি গ্রামসহ কমপক্ষে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত। বাড়িঘর, পুকুর সব পানিতে থৈ থৈ করছে। কোমর থেকে বুকসমান পানিতে সয়লাব মাইলের পর মাইল এলাকা। ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় জিও ব্যাগের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। অনেক এলাকায় আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে।
কুতুবদিয়ায় বাঁধ উপচে ঢুকছে পানি
নিজস্ব সংবাদদাতা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার থেকে জানান, পূর্ণিমার জোয়ারে সমুদ্রে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার উপজেলার ৬ ইউনিয়ন এলাকায় বেড়িবাঁধের ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে পানি টপকাতে দেখা গেছে। দ্বীপের প্রায় আটাশ হেক্টর রোপা আউশসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
কৈয়ারবিল-দক্ষিণ ধুরুং সীমান্ত এলাকার প্রায় আধা কি.মিটার, আলী আকবর ডেইলের পশ্চিম-দক্ষিণ তাবালেরচর, বায়ুবিদ্যুত এলাকা, কাহারপাড়া, উত্তর বড়ঘোপ, উত্তর ধুরুংয়ের মেয়ারাকাটা, মিজ্জিরপাড়া, চরধুরুং, লেমশীখালীর পেয়ারাকাটা গ্রামে জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ টপকাতে দেখা গেছে। অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন, আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত আরও বৃদ্ধি পেতে পারে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি।