ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পুণ:খনন হলেও

বাগেরহাটে হোজির নদী দখল করে ২০ প্রভাবশালীর মৎস্য ঘের : তীব্র ক্ষো

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১ জুলাই ২০২২; আপডেট: ১৭:৫৬, ১ জুলাই ২০২২

বাগেরহাটে হোজির নদী দখল করে ২০ প্রভাবশালীর মৎস্য ঘের : তীব্র ক্ষো

হোজির নদী দখল করে মাছ চাষ

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদী দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী ২০ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে কমপক্ষে ৩টি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন এসব নেতাকর্মীরা। বছরের পর বছর ধরে নদীটি দখল করে রাখার ফলে সম্প্রতি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পুণ:খনন করা এই নদীর কোন সুফল কৃষক পাচ্ছেন না। ভোগান্তি হচ্ছে এলাকাবাসীর। জলাবদ্ধতা প্রকট ও পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ ও নৌ-চলাচল। তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদী দখলের বিষয়টি তাদের জানা নেই। প্রশাসন বলছে -দ্রুত অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হবে।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেমা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের খেগরাঘাট ও ৫নং ওয়ার্ডের কাশিমপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হোজির নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ এর নিচ থেকে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের সুবিধার জন্য পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই বাঁধের উপর নির্মান করা হয়েছে মাছ চাষের খাবারসহ বিভিন্ন মালামাল রাখার খুপড়ি ঘর।

এসময় মৎস্য ঘের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য নিয়োজিত কয়েকজন এগিয়ে আসলে কথা হয় তাদের সাথে। নাম প্রকাশ না করে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তারা। নদীতির মাঝখানের এই ব্রীজটির নিচের এই বাঁধ দিয়ে ঘেরের দুটি অংশ ভাগ করা হয়েছে। নদীর দুই পাশের দুই গ্রামের লোকজনই এখানে মাছ চাষ করেন বলে তাঁরা জানান ।

নদী পাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ কালাম শেখ বলেন, হোজির নদীতে এক সময় বড় বড় নৌকা চলতে দেখেছি। একটা সময় পলি মাটিতে গভীরতা কমে গিয়ে ছোট হয়ে যায় নদীটি। মূলত সেই থেকেই নদীটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। এরপর যে দল (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) যখন ক্ষমতায় থেকেছে সেই দলের লোকজনই প্রভাব খাটিয়ে নদীটি দখলে রেয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে মাছের ঘের করছে।

কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর ধরে নদীটিতে মাছ চাষ করে আসচ্ছে। সম্প্রতি নদীটি পুনখনন করা হয়েছে। ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরাশনে এ নদীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে কোটি টাকা ব্যায় করে নদী খনন করে আমাদের কি লাভ হলো। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম (হুসি)সহ বেশ কয়েকজন প্রভাব খাটিয়ে নদীটি বছরের পর বছর ধরে দখল করে রাখলেও কখনও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়েনের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম নদী দখল করে মাছ চাষের কথা স্বীকার করে বলেন, শুধু আমি একা না, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ মোল্লা, ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নকিব হাই, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরাদ শেখ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ফকিরসহ   স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ২২ জন রয়েছে। এরা সবাই এই ঘেরের অশিংদার।

নদীতে বাঁধ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বাঁধ আমরা দেয়নি। নদী খননের সময় খননের সুবিধার জন্য এই বাঁধ দেয়া হয়েছিলো। আমরা শুধু খুপড়ি ঘর ও নদীর পানি প্রবাহের জন্য একটি পকেট গেট নির্মান করেছি। এ বছর এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৭ লাখ টাকার গলদা, বাগদা, রুই ও কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছেড়েছি এখানে। নদী দখল করে মাছের চাষ বৈধ কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটা অবৈধ আমরা সবাই জানি। প্রায় ৩০/৩৫ বছর ধরে এই নদীতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কেউ কোন কখনও বাধা দেয়নি। প্রশাসন না চাইলে আমরা মাছ চাষ করবো না।

বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের নিচের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জনতে পেরেছি। ইতি মধ্যেই বাঁধ অপসারন করে মাছ চাষ না করার জন্য ওই এলাকায় মাইকিং করতে ডেমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরোজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনি মল্লিক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ওই এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করা হয়েছে। নদীটি দখলমুক্ত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, নদী দখল করে মাছ চাষের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হোজির নদী খননে সরকারের কত টাকা ব্যায় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় অভ্যান্তরিন ছোট নদী, খাল  ও জলাশয় খনন প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটে ১৩টি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ডেমা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে হোজির নদীটি খনন করা হয়। ৮.৫০ কিলোমিটার দৈঘ্য এ নদীটির খননের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৬ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা চুক্তি করা হয়েছে।

 

×