নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা ॥ চলতি আমন মৌসুমে ধান ক্রয়ের সরকারি সিদ্ধান্তে যতটা না আশার আলো দেখেছিল কৃষক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর হয়রানির কারণে ব্যর্থ হয়েছে ধান ক্রয় কার্যক্রম। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে নিয়মের বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে কৃষকদের। গত ২০ নবেম্বর থেকে ৩ হাজার মেট্টিক টন ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নানান জটিলতার কারণে খাদ্য বিভাগ শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ মেট্টিকটন ধান ক্রয় করতে পেরেছে। যা একেবারে নগণ্য।
কৃষি বিভাগ সুত্র বলছে, এ উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। আর ১ লাখ কৃষকের মধ্যে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আছে ৪০ হাজার জন। এদের মধ্য থেকে সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে লটারি করে ৩ হাজার জন কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। খাদ্য গুদামে প্রত্যেকে এক মেট্টিক টন করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। ইতোমধ্যে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই শেষে তালিকা পাঠানো হয়েছে খাদ্য গুদাম গুলোতে। এমনকি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লটারিতে নাম ওঠার খবর কৃষকদের জানিয়ে দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করে তা লটারির করে সুবিধাভোগী কৃষক নির্বাচন করা হয়। তবে দীর্ঘ এক মাস পেরিয়ে গেলেও সন্তোষজনক ধান ক্রয় করতে পারেনি ক্রয় কমিটি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৬০ মেট্টিক টন ধান কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এমন অবস্থায় লক্ষ্যমাত্র পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে খাদ্য বিভাগের ভোগান্তি আর অবহেলায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। একদিকে বৈরী আবহাওয়ায় দেখা মিলছে না সূর্যের, অন্যদিকে কৃষি প্রণোদনার কার্ড হাতে খাদ্য কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় কৃষককে। এমন নিয়মের বেড়াজালে ঘুরপাক খেয়ে অনেকটা ক্লান্ত কৃষকরা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খাদ্য গুদাম রয়েছে দুইটি। এরমধ্যে সদর খাদ্য গুদামে ৫০ মেট্টিক টন ও বামনডাঙ্গা গুদামে ১০ টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। এছাড়া আর কোন কৃষক ধান বিক্রি করতে আসেনি গুদামে। অনেকটা হয়রানি আর কর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরপাক খাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রান্তিক ও মাঝারি গেরস্তরা।
অপরদিকে খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে অনেকটা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ কৃষকদের। লটারিতে নাম ওঠা কৃষকদের প্রথমে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে প্রত্যয়ন নিতে হয়। প্রত্যয়নপত্র জমা দিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে থেকে একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয় কৃষককে। পূরণকৃত আবেদনপত্রের সাথে এক কপি ছবি, দুই কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ও কৃষি প্রণোদনা কার্ডের দুইটি ফটোকপি সংযুক্তি করে আবেদন পত্রটি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দিতে হয়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন করে দিলে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। পরে সুবিধাভোগী কৃষককে ব্যাংকে একটি হিসাব নম্বর খুলতে হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষ গুদামে দেয়ার পর্ব শেষ হয় কৃষকের। এতেই শেষ হয় না কৃষকের হয়রানির পালা। তারপর খাদ্য গুদামে ধান দেয়া শেষে হলে ফসলের বিল নিতে আবারো ঘুরতে হয় কর্তাদের দ্বারে। বিলের কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য আবারো ছুঁটতে হয় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে। তাঁর কাছে স্বাক্ষর নিয়ে যেতে হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। দুজনের স্বাক্ষর নেয়া শেষে বিলের কাগজ ব্যাংকে জমা দিয়ে কষ্টার্জিত ফসলের দাম হাতে পায় কৃষকরা। এতসব ভোগান্তির কারণে প্রান্তিক ও সাধারণ চাষিরা দ্বারস্থ হচ্ছেন ফড়িঁয়াদের। এসব নিয়ম মানতে গেলে পুরো তিন দিন লেগে যায়। তাই সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায় বেশি।
অভিযোগ উঠেছে, খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় প্রান্তিক চাষীদের। ধানের আদ্রোতা আর গুণাগুণ পরীক্ষা করে নিয়ম অনুযায়ী না মিললে তা ফেরত পাঠানো হয়। অথচ ফড়িয়ারে সাথে গোপন আতাতে তাদের দেয়া ধানের আদ্রতা বা গুণাগুণ নির্ণয় করা হয় না। গত কয়েক দিন থেকে গুদামে ধান দিতে আসা অনেক কৃষকরা এমন অভিযোগ তুলেছেন। সাধারণ কৃষকদের দাবি, হয়রানি কমাতে নিয়ম শিথিল করার হোক।
কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, এ বছর খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু ধান দিতে গিয়ে যে পরিমান হয়রানির শিকার হয়েছি তা সাধারণ কৃষকদের নাকে খর দিয়ে ঘুরানোর মতো অবস্থা।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলাউদ্দিন বসুনিয়া বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান দিতে পারছে না। সেজন্য লক্ষ্য একটু কম ধান ক্রয় করা হয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বরাদ্দ অনুযায়ী ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জন করতে পারবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রয় কমিটির
সভাপতি সোলেমান আলী বলেন, আবহাওয়া ভালো না থাকায় ধান ক্রয় করতে পারিনি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব। তিনি হয়রানির বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আমরা ফড়িয়াদের দৌরাত্ব কমাতেই এমন নিয়ম করেছি। যাতে কেউ অভিযোগ করতে না পারে একজনের বরাদ্দ আরেক জন দিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: