সাবালেঙ্কা
বিশ্ব টেনিসে গত কয়েক মৌসুম ধরেই নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে এসেছেন এরিনা সাবালেঙ্কা। গত বছর জীবনের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পাশাপাশি বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থানটিও দখল করেন বেলারুশের এই তারকা। চলতি মৌসুমেও সেই দাপট অব্যাহত রাখলেন সাবালেঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মাধ্যমে নতুন মৌসুমের সূচনা করা ২৬ বছর বয়সী এই তারকা সর্বশেষ রবিবার জিতলেন উহান ওপেনের ট্রফি। এর ফলে পুরো মৌসুম জুড়েই নিজের দাপট অব্যাহত রাখলেন ছয় ফিট উচ্চতার এই তারকা খেলোয়াড়।
তবে উহান ওপেন যেন একেবারেই নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন এরিনা সাবালেঙ্কা। চীনের এই টুর্নামেন্টে গড়লেন টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় নজির। রবিবার ফাইনালে বর্তমান বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের এই দুই নম্বর তারকা কঠিন লড়াইয়ের পর ৬-৩, ৫-৭ এবং ৬-৩ গেমে পরাজিত করেন কিনওয়েন ঝ্যাং কে। আর তাতেই নিজেকে নিয়ে গেলেন ইতিহাসের পাতায়।
চীনের এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে টানা হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়লেন তিনি। এমন কীর্তির পর দারুণ রোমাঞ্চিত বেলারুশ সুন্দরী। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাবালেঙ্কা বলেন, ‘এটা পাগলাটে ব্যাপার। এই জায়গাটা ঠিক আমার নিজের বাড়ির মতোই লাগে।’
২০১৮ সালে প্রথমবার উহান ওপেনে অংশ নিয়েছিলেন সাবালেঙ্কা। অভিষেক আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। পরের বছরও শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন প্রতিভাবান এই তারকা। কিন্তু ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত করোনার কারণে এই টুর্নামেন্ট আর অনুষ্ঠিত হয়নি। কয়েক বছরের বিরতি শেষে এবার কোর্টে গড়ায় উহান ওপেন। এবারও সেই একই চিত্রনাট্য।
অলিম্পিকের স্বর্ণপদকজয়ী স্বাগতিক তারকা কিনওয়েনকে হারিয়ে চলতি বছরের চতুর্থ শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন সাবালেঙ্কা। যা তার ক্যারিয়ারের ১৭তম ট্রফি। ডব্লিউটিএ ১০০০ পর্যায়ের সপ্তম শিরোপা। অর্থাৎ উহান ওপেনে এখন পর্যন্ত কোন পরাজয় নেই বেলারুশ সুন্দরীর। এখন পর্যন্ত খেলা ১৭টি ম্যাচের সবকটিতেই জয়ের দেখা পেয়েছেন বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা।
তবে এবারের জয়টা মোটেও সহজ ছিল না সাবালেঙ্কার। যদিওবা মাত্র ৩৮ মিনিটে প্রথম সেট জিতে ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন ঠিক টানা দুইবার বর্তমান চ্যাম্পিয়নের মতোই। কিন্তু দ্বিতীয় সেটেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় কিনওয়েন ঝ্যাং। তবে তৃতীয় সেটে আবারও দুর্দো-প্রতাপে ফিরে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মাতেন সাবালেঙ্কাই। লড়াই কঠিন হলেও শেষ পর্যন্ত জয় দিয়ে মিশন শেষ করতে পারার আনন্দে উদ্বেলিত বেলারুশ সুন্দরী।
কিনওয়েনকে হারিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ম্যাচের মাঝপথে আমার মূল ফোকাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর সেই সুযোগ নিয়েই সে ম্যাচে কামব্যাক করে। তখন আমার মাঝে কিছুটা হতাশা কাজ করে। ফলে ম্যাচটা তৃতীয় সেটে গড়ায়। তিন নম্বর সেট খেলার সময় বল আরও ভারী হয়ে উঠে। সেই সময়ে আমি নিজেও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।
আমি বলবো না সে ভিন্নরকম স্টাইলে খেলেছে। তবে তখন আমি এমনভাবে খেলার চেষ্টা করেছি যেন নিজেরই বিরুদ্ধে খেলেছি। তবে যাই হোক তৃতীয় সেটে আমি যেভাবে সবকিছুর বিরুদ্ধে খেলেছি এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছি তাতেই আমি অনেক বেশি আনন্দিত।’
কয়েক বছরের বিরতির পর এবার নতুন রানী পাওয়ার ধারণা করেছিলেন টেনিসবোদ্ধারা। কিন্তু এবারও রাজত্ব হাতছাড়া করতে দেননি সাবালেঙ্কা। এবার উহান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্যারিয়ারের ১৭তম ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন বেলারুশ সুন্দরী। যার পাঁচটিই এই চীনে। টেনিসের উম্মুক্ত যুগে যে কোন খেলোয়াড়ের মধ্যেই এখন সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড এরিনা সাবালেঙ্কার। চলতি বছর টা কিনওয়েন ঝ্যাংয়ের কাছে বেশ স্মরণীয়।
কেননা, প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০২৪ অলিম্পিক গেমসে যে চীনকে প্রথমবারের মতো স্বর্ণ পদক উপহার দেন তিনি। এবার উহানেও শুরু থেকে দাপট দেখান স্বাগতিক তারকা। শুধু তাই নয়? চীনের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এবার ডব্লিউটিএ ১০০০ পর্যায়ের কোন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন ঝ্যাং। বর্তমান বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর খেলোয়াড়ের বিপক্ষে ফাইনালেও খেলেছেন চোখে চোখ রেখে।
কিন্তু দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পরাজয়ই সঙ্গী হলো তার। ম্যাচের শেষে কিনওয়েন বলেন, ‘ম্যাচের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে আমার গতি বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু সেই সময়ে নিজের সেরাটা দিতে পারিনি। তথাপি যেভাবে ম্যাচে লড়েছি তাতেই আমি গর্বিত।’
উহানে ছেলেদের এককে শততম শিরোপা জয়ের সামনে থাকা নোভাক জোকোভিচকে থামিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইয়ানিক সিনার। ফাইনালে নাম্বার ওয়ান তারকা সিনার ৭-৬ (৭/৪) এবং ৬-৩ গেমে পরাজিত করেন জোকোভিচকে। মজার ব্যাপার হলো চলতি মৌসুমে ইয়ানিক সিনার যে টুর্নামেন্টগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মেয়েদের এককে সেগুলোতেই শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন এরিনা সাবালেঙ্কা!
যার শুরুটা হয়েছিল মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে। এরপর ধারাবাহিকভাবে সিনসিনাত্তি ওপেন, ইউএস ওপেন এবং সবশেষে উহান ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এরিনা সাবালেঙ্কা আর ইয়ানিক সিনার।