ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সপ্তম স্বর্গে সি আর সেভেন

জেড আলম

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১০ জুন ২০২৫

সপ্তম স্বর্গে সি আর সেভেন

সপ্তম স্বর্গে সি আর সেভেন

এ সুখের নেই কোনো সীমানা। সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে এ বাক্যটি এখন খুবই মানানসই। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলাতেও পারফরমেন্সের তুঙ্গে অবস্থান করছেন ৪০ বছর বয়সী মহাতারকা। এই বয়সে অনেকে খেলা দূরে থাক; মাঠে যেতেও ভয় পান। অথচ পর্তুগিজ তারকা যুবাদের মতোই মাঠ মাতিয়ে চলেছেন। যার প্রমাণ রেখেছেন স্পেনের লামিনে ইয়ামাল, পেদ্রিদের মতো টগবগে তরুণদের পেছনে ফেলে উয়েফা নেশন্স লিগের ট্রফি জিতে। 
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোনাল্ডো যেন আরও অপ্রতিরোধ্য, দুর্বার হয়ে উঠেছেন। পর্তুগাল অধিনায়কের বর্তমান বয়স ৪০ বছর। অথচ মাঠের লড়াইয়ে তাঁকে দেখে মনে হয় টগবগে যুবা। তারকা এই ফরোয়ার্ডের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, ৩০ বছরের পর থেকে তিনি আরও বেশি দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার ঝুলিতে জমা হয়েছে একাধিক গৌরবময় বিশ্বরেকর্ডও। 
নেশন্স লিগের ফাইনালে টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর সতীর্থরা যখন বাঁধনহারা উদযাপনে ছোটাছুটি করছেন; রোনাল্ডো তখন কাঁদছেন। হাঁটু গেড়ে মাঠে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কেউ একজন চেষ্টা করলেন তাকে টেনে তুলতে। কিন্তু তিনি তখন যেন অন্য জগতে। নিজেকে সমপর্ণ করে দিয়েছেন সময়ের হাতে। রোনাল্ডোর কান্না সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কয়েকবারই দেখা গেছে। ২০২২ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে। সৌদি আরবে কিংস কাপ ফাইনাল হেরে। ইউরোয় স্লোভেনিয়ার কাছে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়ে। আলোচনা-সমালোচনা, ট্রল, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, কি হয়নি সেসব কান্না নিয়ে। তবে এবারের কান্না কেবলই প্রাপ্তির, শুধুই তৃপ্তির।
চোখের জল আর মুখের হাসি মিলেমিশে একাকার। কতদিন পর রোনাল্ডো বুঝলেন, এই কান্নার মতো সুখ আর হয় না। একটি ট্রফি, বহু কাক্সিক্ষত একটি ট্রফির ছোঁয়ায় এসেছে এমন সুখের কান্না। স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নেশন্স কাপ জিতে তিনি দেখা পেয়েছেন এই স্মরণীয় মুহূর্ত। সমতায় ফেরানো গোল করে দলকে শিরোপার পথে এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্বও তার। ক্যারিয়ারে ট্রফি কম জেতেননি সি আর সেভেন। দেশের হয়েও জিতেছেন। তার পরও এবারেরটি সত্যিই বিশেষ কিছু। অনেক দিন অপেক্ষার পর যে এই স্বাদ পেয়েছেন। তার হাসি, তার কান্না, তার অনুভূতির প্রকাশ, সবকিছুতেই মিশে থাকল তা।
শুধুই কি পর্তুগালের জয়? বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখানো, সংশয়-ভ্রুকুটিকে মাড়িয়ে, অনেক অনেক প্রশ্নকে উড়িয়ে এগিয়ে চলা, এত বছর পরও নিত্য নিজেকে প্রমাণ করা আর প্রাসঙ্গিক রাখার চ্যালেঞ্জ, সব মিলিয়ে এবারের নেশন্স লিগ যেন রোনাল্ডোর গ্রেটনেসেরও একটি জয়।
এবারের নেশন্স লিগে ৯ ম্যাচে ৮ গোল। কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল। এই ৪০ বছর বয়সে এমন পারফরম্যান্স প্রায় অবিশ্বাস্য। ট্রফি নিয়ে রোনাল্ডোর নানা উদযাপন, বাচ্চাদের মতো করে নানা ভঙ্গি, এসবেই বোঝা যাচ্ছিল তার খুশি। ম্যাচের পর তা ফুটে উঠল কণ্ঠেও। রোনাল্ডো বলেন, কী আনন্দ! এই প্রজন্মের জন্য এটা জরুরি ছিল, এই মানের একটি ট্রফি যাদের প্রাপ্য। আমাদের পরিবারের জন্যও। আমার বাচ্চারা এসেছে এখানে, আমার স্ত্রী, ভাই, বন্ধুরা। তিনি আরও বলেন, পর্তুগালের কথা যখন হয়, এই অনুভূতিই বিশেষ কিছু। এই প্রজন্মের অধিনায়ক হতে পারা দারুণ গর্ব ও সম্মানের। জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারা মানে সবসময়ই প্রাপ্তির চূড়া। 
পর্তুগালের ফুটবল সংস্কৃতি ও ইতিহাস অনেক পুরানো। তার পরও সেটিকে এখন পরিষ্কার ভাগ করা যায় রোনাল্ডো পূর্ব ও রোনাল্ডো যুগ হিসেবে। তার আবির্ভাবের আগে কোনোদিন বড় কোনো আসরের সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি তারা। রোনাল্ডোর হাত ধরেই সেই দলটি একটি ইউরো ও দুটি নেশন্স কাপ জয় করেছে। সেমিফাইনাল খেলল মোট চারবার, প্রতিটিতেই আছে রোনাল্ডোর গোল। ক্লাব ফুটবলে রেকর্ড-অর্জন-ট্রফিতে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের পরও তাই দেশের প্রাপ্তিতে রোনাল্ডোর উচ্ছ্বাস স্পর্শ করে সর্বোচ্চ চূড়া।

সি আর সেভেন এ প্রসঙ্গে বলেন, পর্তুগালের জন্য কিছু জিততে পারা সবসময়ই স্পেশাল। ক্লাবের জয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি, কিন্তু পর্তুগালের হয়ে জয়ের চেয়ে সুখের কিছু আর নেই। এজন্যই এই কান্না। দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই আনন্দের সীমা নেই। এটা সুন্দর, দারুণ। গোটা জাতির জন্য এটি উপহার। আমরা ছোট্ট একটি দেশ, কিন্তু আমাদের আকাক্সক্ষা অনেক বড়।

×