
দুবাইয়ে গত ৮ ডিসেম্বর ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করে বাংলাদেশের যুবারা
পাকিস্তানের মাটিতে স্মরণীয় টেস্ট সিরিজ জয় ॥ ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথম পাকিস্তান সফর করে ২০০১ সালে। ইনিংস ও ২৬৪ রানে হারতে হয়েছিল সাদা পোশাকের নবীন দলটাকে। তবে ২০০৩ সালে দ্বিতীয় সফরে মুলতান টেস্টে পরাশক্তিদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। জিততে জিততে হারতে হয়েছিল ১ উইকেটে। ২৫ আগস্ট ২০২৪- রাওয়ালপিন্ডিতে ঘটে ২১ বছরের অপেক্ষার অবসান।
১০ উইকেটের বিশাল ইতিহাস গড়া জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহীম খেলেন ১৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে ৬৬৫ রানের পাহাড় গড়ে পার্থক্য গড়ে দেন মুশি। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টেস্টেও ছিল টাইগারদের দাপট। এবার জয় ৬ উইকেটে। ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়া দলের হয়ে ১৩৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে নায়ক লিটন দাস। বাংলাদেশ করে ২৬২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে ৫ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। নাহিদ রানা ৪। ১৫৫ রান ও ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা মেহেদি হাসান মিরাজ।
যুব এশিয়া কাপে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয় ॥ গত ৮ ডিসেম্বর ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুব এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। দুবাইয়ের ফাইনালে ১৯৮ রানের পুঁজি নিয়েও প্রতিপক্ষকে মাত্র ১৩৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে তুলে নেয় ৫৯ রানের বড় জয়। আসরজুড়ে অসাধারণ বোলিং উপহার দেওয়া ইকবাল হোসেন ইমন জ্বলে ওঠেন ফাইনালেও। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দুটি পুরস্কার জিতে নেন ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি এ পেসার। ম্যান অব দ্য ফাইনালের পাশাপাশি হন অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড়।
৭ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৪ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৪ রানে ৪ উইকেট দখল করে ম্যাচসেরা হওয়া পেসার ফাইনালেও পান সেরার স্বীকৃতি। পাঁচ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি। তার হাতেই ওঠে যুব এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। গত বছর এই দুবাইয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেট গৌরবময় সাফল্য পায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত দিয়ে। সেবার স্বাগতিক আরব আমিরাতকে বিধ্বস্ত করে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপ জয় করে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ঐতিহাসিক টি২০ সিরিজ জয় ॥ টি২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবসময়ই ভয়ংকর। ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটে প্রথম দল হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয় করা ক্যারিবীয়দের ছাড়া আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল, বিপিএলসহ বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টই বলতে গেলে অচল! সেই উইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে ৩-০’ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ, তাও আবার নিজেদের প্রিয় ওয়ানডেতে একই ব্যবধানে হারের পর! কিংসটাউনে আরনস ভেল গ্রাউন্ডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৮০ রানের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে টাইগাররা। এটি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে টি২০-তে সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের।
আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে। জবাবে ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। ক্যারিবিয়দের এই প্রথম টি২০-তে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দেয় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এই সাফল্যে বড় অবদান বোলারদের। অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান ৮ উইকেট নিয়েছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৪.১৮ হারে রান খরচ করে। তাই ক্যারিয়ারে প্রথমবার সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে ফর্মে নেই লিটন, কিন্তু কিপিংয়ে-নেতৃত্বে তার ক্ষুরধার মস্তিস্কেই এবার অবিস্মরণীয় সাফল্য পায় দল।
রিশাদ হোসেন, নাহিদ রান ও জাকের আলি অনিকের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। পিন্ডি টেস্টে নাহিদের একটি ডেলিভারির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫২ কিলোমিটার। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা নতুন রেকর্ড। ২২ বছর বয়সী ডানহাতি ৬ টেস্টে নিয়েছেন ২২ উইকেট, ৫ উইকেট একবার ও ৪ উইকেট একাবার। ৩ ওয়ানডেতে শিকার ৪ উইকেট। উইন্ডিজ সিরিজে ৬টিসহ চলতি ২০২৪ সালে ২৪ ম্যাচে ৩৫ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে টি২০তে যা সর্বোচ্চ শিকারের রেকর্ড। এ বছর ১৯ ম্যাচে ৩০ উইকেট তাসকিন আহমেদের। ২০২১ সালে ২০ ম্যাচে ২৮ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
সাবিনাদের টানা দ্বিতীয় সাফ জয় ॥ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে নিজেদের নাম লিখেছেন সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমারা। গত ৩০ অক্টোবর সপ্তম নারী সাফের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে অবিস্মরণীয় শিরোপা জয়ের গৌরবে ভাসে বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলার বাঘিনীদের গর্জনে কাঁপে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবল।
এর আগে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আগের সাফের ফাইনালেও এই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার বাংলার মেয়েরা প্রথম জয়ের স্বাদ পায়। এবার একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখার দারুণ কীর্তি গড়ে বাংলার অদম্য মেয়েরা। ফাইনালে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে আলো ছড়িয়েছে সাবিনার দল। প্রথমার্ধে স্কোরলাইনে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই বিরতিতে যান দু’দলের ফুটবলাররা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার কিছুক্ষণ পরই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে এগিয়ে নেন মনিকা চাকমা। অবশ্য তিন মিনিট পরই দলকে সমতায় ফেরান নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা। ম্যাচের ৮১তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে বাংলাদেশকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন ঋতুপর্ণা চাকমা।
হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যুবারা ॥ গত ৩ ডিসেম্বর ওমানের মাসকাটে যুব এশিয়া কাপ হকিতে থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে। যা বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে প্রথম। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য যুব বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে সাত দল অংশগ্রহণ করবে। স্বাগতিক ভারত সরাসরি খেলবে। বাকি ছয় দেশ মাসকাটের এই জুনিয়র এশিয়া কাপ থেকে খেলার সুযোগ করে নেয়। বাংলাদেশ বি-গ্রুপের তৃতীয় হয়ে এ গ্রুপের চতুর্থ দল থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ৫ম-৬ষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচের জন্য।
থাইল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচ নিশ্চিত করে। জাতীয় দল বা যুব দল কোনো পর্যায়েই থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারের রেকর্ড নেই। জিতলেই বিশ্বকাপ এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি চাপ ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস- দুটিকেই দূরে সরিয়ে রেখে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের অদম্য যুবারা।
মাঠে বেশ স্বাভাবিক খেলা খেলেই কাঙ্খিত জয় এনেছেন মওদুদুর রহমানের শিষ্যরা। ওমানের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে মিশন শুরু করা যুবারা শক্তিধর পাকিস্তানের কাছে হারে ৬-০ গোলে। তবে এরপরই শক্তিশালী মালয়েশিয়া ও চীনের সঙ্গে নাটকীয় ড্র করে স্বপ্ন জিইয়ে রাখে। যা পুর্নতা পায় থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বড় জয়ে।
বাফুফেতে সালাউদ্দিন যুগের অবসান ॥ গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকেই ফুটবল অঙ্গনের নানা দিক থেকে ওঠে সালাউদ্দিন হঠাও দাবি। সমর্থক, সাবেক ফুটবলার, সংগঠক থেকে শুরু করে অনেকেই তার পদত্যাগ ও নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার দাবি জানায়। যদিও সে সব দাবির মুখে নিজ বাসায় স্বেচ্ছাবন্দি থাকাবস্থায়ও সালাউদ্দিন বলেছিলেন পদত্যাগ না করার কথা। একই সঙ্গে দিয়েছিলেন পঞ্চম মেয়াদে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা। তবে সেই ঘোষণায় অটল থাকতে পারেননি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রায় এক মাস পর বাফুফে ভবনে এসে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। সালাউদ্দিনের দীর্ঘ ১৬ বছরের ‘শাসনামল’-এর অবসানের পর অনেক জল্পনা কল্পনা ছিল, কে হচ্ছেন নতুন সভাপতি? চার বছর মেয়াদে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন তাবিথ আউয়াল। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। এরপর ২০১২, ২০১৬ ও ২০২০ নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। যদিও অভিযোগ আছে, মসনদ ধরে রাখতে নানা সময় শেখ হাসিনা সরকারের নানা সরকারি সংস্থা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাজে লাগিয়েছেন তিনি।