সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন উশুর প্রতিষ্ঠাতারা
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা এবং ফেডারেশনের বিগত সকল আর্থিক হিসেবের অডিটসহ সাত-দফা দাবী পেশ করেছেন উশুর প্রতিষ্ঠাতারা।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উশু ফাউন্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান এডঃ শহীদুল হক ভূঁইয়া, মহাসচিব শিফু দিলদার হাসান (দিলু), কোচ, জাজেজ ও সংগঠকরা এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ... শহীদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘উশুতে বর্তমান স্বৈরাচারী কমিটির বিলুপ্তির দাবি করছি। বাংলাদেশে এই খেলার প্রতিষ্ঠাতারা অনেক পরিশ্রম করে এ জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনটি গড়ে তুলেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্জন এনে দিয়েছেন। কিন্তু তারপর ক্রীড়ার বিভিন্ন ফেডারেশনের মতো এ ফেডারেশনটিকেও রাজনৈতিকভাবে দখল করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১০ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শেষ স্বর্ণপদক জয়ের পর এ ডিসিপ্লিন আর কোন স্বর্ণ আনতে পারেনি। এতবছর ধরে কোন নতুন অর্জন হয়নি।
আপনার জানেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে উশুর এডহক কমিটি তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করে একটি কমিটি গঠন করেছে। তাই আমাদের দাবী হল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও আওয়ামী লীগের ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের যোগসাজশে গঠিত এ অগণতান্ত্রিক কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।’এই সংগঠক উশু খেলোয়াড়, বিচারক ও প্রশিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও অর্থিক ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা চান।
উশুর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিফু দিলদার হাসান বলেন, ‘তারা নিজেদের অযোগ্যতার দরুন স্পন্সর আনতে পারেনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বরাদ্দর টাকা নিয়েছে কিন্তু তারপরেও ক্রীড়ার উন্নয়ন বা আয়োজনে সেগুলো কাজে লাগায়নি। তারা আন্তর্জাতিক কোন গেমসে অংশ নেয়নি। শুধু একটা আমন্ত্রণমূলকে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা বাবদ ২১ লাখ টাকা খরচ করেছে। এভাবেই তারা খেলাটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
এই উশু সংগঠক আরও জানান, ‘ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে ঢাকায় আয়োজিত সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ তিনটি স্বর্ণপদক, সাতটি রৌপ্যপদক ও ১১টি তাম্রপদক জয় করেছে। এছাড়া ২০১০ এসএ গেমসে দুইটি স্বর্ণপদক ও ২টি তাম্রপদক লাভ করেছে। সেই সাথে বিকেএসপি, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড ও বিভিন্ন সংস্থায় খেলাটি যুক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও নেতৃত্ব দিয়েছে সংগঠকরা। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল করার পর থেকে ফেডারেশন তার জৌলুশ ও পথ হারিয়ে ফেলে।
অভিযোগ রয়েছে ২০১০ এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী খেলোয়াড় মেজবাহ উদ্দিনকে গত ১০ বছর ধরে ফেডারেশনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি! জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে তাকে সদস্য মনোনীত করা হলেও তাকে সহযোগিতা করা হয়নি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, উশুর সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেনে নিজে উশুর লোক নন। তবু তিনি সেনাবাহিনী ও আনসারের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিফু দিলদার হাসান আরও বলেন, ‘ফেডারেশনের যিনি কোচ তিনি খেলাটাও বোঝেন না। তিনি এই ডিসিপ্লিনে খেলেননি। তার একটা সার্টিফিকেট আছে বলে দাবি করেন। কিন্তু জানা গেছে সেই সার্টিফিকেটটাও জাল! এছাড়া সাইক্লিংয়ের এক কোচকে এনে উশুর ট্রেজারার বানানো হয়েছে যিনি ইতোপূর্বে বিজেএমসির সাইক্লিং কোচ ছিলেন। এভাবে ফেডারেশনে যুক্ত করা হয়েছে উশুর বাইরের লোকদের।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উশুর আন্তর্জাতিক কোচ ও সিলেট উশুর সংগঠক আনোয়ার হোসেন জানান- তার সাথে আর্থিক প্রতারণা করেছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন। তিনি জানান যে আন্তর্জাতিক কোচেজ ও রেফারিজ প্রশিক্ষণে ম্যাকাও যাওয়া ও খরচ বাবদ তার পাওনা ৩০০ ডলার বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাননি।
এছাড়া উশু ক্লাব সংগঠক রেজাউল করিম সাদি বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন-২০১৮ সালে ক্লাব রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অর্থও নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। বাধ্য করেছেন উশুর নিম্নমাণের ড্রেস কিনতেও। কিন্তু আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তাদের আর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অভিযোগ এনেছেন খেলা আয়োজন করতে বাধা দেবারও।
এর আগে, উশু ফেডারেশনের সহসভাপতি আলমগীর শাহও দাবি করেছিলেন, ২০১০ সালের পর ২০২৪ পর্যন্ত উশুতে উল্লেখযোগ্য অর্জন নেই। ২০১৭ তে একটা ইভেন্টে অংশ নিয়েও স্বর্ণ আনতে পারেনি। সেখানে শুধু ২/১ টা করে ব্রোঞ্জ ও রৌপ্যপদক ছাড়া আর কিছুই আনা যায়নি। এছাড়া এই দীর্ঘ সময়ে আর কিছুই অর্জন হয়নি।
সেসময় ফেডারেশনের সহসভাপতি আরও দাবি করেছিলেন যে তার সাক্ষর জাল করে সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন সময়ে সময়ে বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন!
সংবাদ সম্মেলন শেষে উশুর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শিফু দিলদার হাসান বলেন, ‘আজ তো আমাদের দাবিগুলো জানালাম। ক্রীড়ার সার্চ কমিটিকে আমরা সবকিছু বিস্তারিত জানাবো। এরপরও কাজ না হলে স্বচ্ছতা ফেরাতে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’
শিফুদের বাকি ৬টি দাবি হচ্ছে : ফেডারেশনের বিগত ১৪ বৎসরের হিসাব-নিকাশ নিবন্ধিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে হিসাব নিরীক্ষা করে প্রকাশ করা, উশু ফাউন্ডার গণের নেতৃত্বে ফেডারেশনের কমিটি গঠন, ফেডারেশনের সব দুর্নীতিবাজদের বিচার করা, ক্রীড়াক্ষেত্রে ভাল ফলের জন্য উশু খেলোয়ার, বিচারক ও প্রশিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সরকারী সহায়তা প্রদান, জাতীয় খেলোয়ারদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান ও ফেডারেশনের অস্বচ্ছল বিচারক, প্রশিক্ষক ও খেলোয়ারদের সরকারী আর্থিক সহায়তা প্রদান।
রুমেল খান//শহিদ