শিরোপা জিততে আত্মবিশ্বাসী বাংলার মেয়েরা

‘ফাইনাল ম্যাচ নিঃসন্দেহে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় হবে। অবশ্যই নেপাল অনেক ভালো দল। মঙ্গলবার অসাধারণ খেলে তারা ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। এজন্য তাদের অভিনন্দন। আমার দলের মেয়েদের ধন্যবাদ তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফাইনাল পর্যন্ত উঠে লক্ষ্যপূরণ করতে পারায়। আর একটা ম্যাচ বাকি
আছে। আশাকরি ফাইনালেও আমরা জিতব।’ কথাগুলো বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। আজ বৃহস্পতিবার পর্দা নামতে যাচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের। সন্ধ্যা ৬টায় স্বাগতিক বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে নেপালের। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। 
নেপালের কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং বলেছেন, ‘ফাইনালে জিতে আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে খেলেছি, ফাইনালে সেভাবে খেলব না। সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশলে খেলব। আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ^াসী।’ নেপাল অধিনায়ক  প্রীতি রায় বলেন, ‘ফাইনালটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হবে। আমরা আত্মবিশাসী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে। আমাদের কষ্টের ফল পাব আশা করি।’
এই আসরে এখনো অপরাজিত আছে বাংলাদেশ। তাছাড়া নেপালের কাছে কখনো হারেনি তারা। আগের ছয় ম্যাচের ৫টিতেই জিতেছে (১টিতে ড্র)। বাংলাদেশ অধিনায়ক শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমরা ফাইনালে উঠেছি। কাল আমাদের ম্যাচ। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন জিততে পারি। প্রথম ম্যাচে আমরা নেপালের সঙ্গে যেভাবে খেলেছিলাম, ফাইনালেও সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব। আমাদের লক্ষ্য ছিল ফাইনাল। এখন ফাইনালে চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করতে এবং দলকে শিরোপা জেতাতে। যদি মনে হয় আমার চেয়ে সতীর্থদের গোল করার সুযোগ বেশি, তাহলে নিজে গোল না করে তাদের দিয়েই গোল করাব। শুধু কাপটা আমাদের চাই। সেভাবেই খেলতে চাই।’ 

ছোটন আরও বলেন, ‘ফাইনালে আমরা ভারতকে আশা করেছিলাম, এমনটা অনেকেই বলেছেন। কিন্তু আমরা এমনটা ভাবিনি। ফুটবলে যেদিন যে দল ভালো খেলবে, সে দলই জিতবে। ভারত ভালো দল। তারা ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ^কাপে খেলেছে। এখানে প্রথম ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের হারাতে পারেনি। আবার তৃতীয় ম্যাচে নেপালের কাছে তারা হেরে গেছে। এখানে প্রতিটি ম্যাচই ভিন্ন। ফাইনালে নেপাল আমাদের প্রতিপক্ষ। আবার তারা গ্রুপ পর্বে আমাদের কাছে হেরেছে। তাই বলে তাদের খাটো করে দেখতে রাজি নই। তারা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই এ পর্যন্ত এসেছে।’ 
সাফের খেলাগুলোর সূচি এভাবেই করা হয়ে থাকেÑ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আরেকটি ম্যাচ খেলতে হয়। ফলে খেলোয়াড়দের রিকভারি করার সুযোগ অনেক কম থাকে। তার ওপর প্রতিটি ম্যাচই হয় হাই-ইনটেনসিটির। খেলার সময়ের ব্যবধানটা আরেকটা বাড়ালে সবার জন্যই ভালো হতো বলে মনে করেন ছোটন। 
বাংলাদেশ দলের সব খেলাই হয়েছে ফ্লাডলাইটে। ফাইনালও হবে ফ্লাডলাইটে। কিন্তু বাংলাদেশ দল সবসময় অনুশীলন করেছে দিনের আলোয়। এ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘যে আলোতেই খেলা হোক না কেন, আমরা তাতে অভ্যস্ত। মনে করি না এটা কোন সমস্যা। এর আগেও এভাবে খেলেছি এবং দলও সাফল্য পেয়েছে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ম্যাচ খেলায় তাদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে নেপাল কোচ বলেন, ‘বাংলাদেশের দুর্বলতা প্রকাশ করব না।’
কোচ ছোটন বলেছেন, ‘আশাকরি, দর্শকরা উপভোগ করবে ফাইনাল ম্যাচ। ফাইনালে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবো আমরা।’ 
এই আসরে বাংলাদেশ যেখানে ৮ গোল দিয়ে মাত্র ১টি গোল হজম করেছে, সেখানে নেপালও করেছে ৮ গোল। তবে খেয়েছে ৪টি গোল। আজ দলীয় লড়াইয়ের পাশাপাশি দুদলের দুই ফরোয়ার্ডও লড়বেন এককভাবে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে। বাংলাদেশের শামসুন্নাহার এবং নেপালের আমিশা কারকি উভয়েই করেছেন ৪টি করে গোল। দুজনেই করেছেন ১টি করে হ্যাটট্রিক। 
এবারের আসরে লিগ পর্বে প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৩-১ গোলে এরপর ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র এবং ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে সর্বোচ্চ ৭ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট পাওয়া নেপাল বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভুটানকে ৪-০ এবং ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসেছে নেপাল।
এখন দেখার বিষয়, আজকের জমজমাট ফাইনালে স্বাগতিক দর্শকদের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে নেপালকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই আসরের শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে পারে কি না বাংলার বাঘিনীরা।