ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চ্যাটজিপিটি থেকে সম্পর্কের পরামর্শ নিচ্ছেন? সাবধান, ঘটতে পারে যে বিপর্যয়

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৮, ১২ জুন ২০২৫

চ্যাটজিপিটি থেকে সম্পর্কের পরামর্শ নিচ্ছেন? সাবধান, ঘটতে পারে যে বিপর্যয়

ছবি:সংগৃহীত

এই ডিজিটাল যুগে মানুষ অনেক কিছুতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সাহায্য নিচ্ছে, এমনকি নিজেদের সম্পর্কের সমস্যাতেও। কেউ কারো সঙ্গে মান-অভিমান করলে বা সম্পর্ক নিয়ে দ্বিধায় ভুগলে এখন অনেকেই চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটের কাছে ছুটে যাচ্ছেন পরামর্শের জন্য। কিন্তু, এতে অনেক সময়ই সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং আরও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

সম্পর্কে ঝগড়া, আর তাতে চ্যাটজিপিটিকে স্মরণ!
ভাইস ম্যাগাজিনের লেখিকা স্যামি কারামেলা সম্প্রতি লিখেছেন, একজন পুরুষ তাঁর প্রেমিকার আচরণ নিয়ে পরামর্শ চাইতে যোগাযোগ করেছিলেন। কারণ, তাঁর প্রেমিকা নাকি প্রায়ই চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলে সম্পর্ক নিয়ে মতামত নিচ্ছেন, এমনকি সেসব কথাও ঝগড়ার সময় তুলে আনছেন!

কারামেলা প্রথমে এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তাঁর মুখের কফি প্রায় গলায় আটকে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি ছিলেন বেশ নিরুত্তাপ—তিনি বরং বলছিলেন, প্রেমিকার এই অভ্যাস তিনি বেশ ‘মজার’ মনে করেন।

চ্যাটজিপিটি কি নিরপেক্ষ?
এই ঘটনা থেকে আগ্রহী হয়ে কারামেলা খোঁজ নিতে শুরু করলেন—আসলে কীভাবে মানুষ AI-এর কাছ থেকে সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছে। এক বন্ধুবান্ধবও জানান, তিনিও মাঝে মাঝে চ্যাটজিপিটির কাছে নিজের সম্পর্কের সমস্যা তুলে ধরেন, কারণ তিনি ভাবতেন, AI অন্তত পক্ষপাতদুষ্ট নয়।

কিন্তু কিছুদিন পরেই সেই বন্ধু বুঝে যান, চ্যাটজিপিটি বরং তাঁর কথারই সমর্থন করে চলে, এমনকি যেসব ব্যাপারে তাঁকে একটু ভেবে দেখতে বলা দরকার ছিল, সেগুলোতেও একপ্রকার "তুমি-একদম-ঠিক" ভঙ্গি নেয়। এই একরোখা সমর্থন অনেক সময় বিপজ্জনকও হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য আর AI-পরামর্শ – একটা খারাপ জুটি
কারামেলা তাঁর লেখায় জানান, তিনি নিজেও ওসিডি (Obsessive Compulsive Disorder) নিয়ে সংগ্রাম করছেন। তাঁর মতে, কেউ যদি চ্যাটজিপিটির কাছে সম্পর্ক নিয়ে পরামর্শ চায়, কিন্তু নিজের মানসিক অবস্থা না জানায়, তাহলে চ্যাটজিপিটি হয়তো এমন কিছু পরামর্শ দেবে যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।

রেডিটের ‘r/ROCD’ সাবরেডিটে কেউ কেউ শেয়ার করেছেন, কীভাবে চ্যাটজিপিটি তাঁদের বারবার প্রশ্ন করে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ তো একেবারে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছেন এর কথায়!

এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ওসিডি-তে আপনি সবসময় ‘তবে যদি?’ ধরনের প্রশ্ন করে যেতে থাকেন। আর চ্যাটজিপিটি তো আপনাকে অনবরত উত্তর দিয়ে যাবে। এতে আপনি শুধু আরেকটা 'হ্যাঁ, কিন্তু' খুঁজতে থাকেন।”

তাহলে কী দাঁড়াল?
চ্যাটজিপিটি বা অন্য AI টুল ভালোভাবে সহায়তা করতে পারে অনেক কাজেই—কোডিং, লেখালেখি, এমনকি পড়াশোনা নিয়েও। কিন্তু মানুষের মনের জটিলতা, আবেগ আর সম্পর্কের সূক্ষ্মতা বোঝার মতো মন বা হৃদয় ওর নেই।

মানুষের মনোযোগ, সহানুভূতি, আর বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া ভালো পরামর্শ দেওয়া যায় না। তাই AI হোক আপনার সহায়ক, কিন্তু আপনার মন অথবা সম্পর্কের চালক নয়।
 

মারিয়া

×