
ছবিঃ সংগৃহীত
মানুষ পৃথিবীর ইতিহাস ধরে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে কিছু না কিছু আবিষ্কার করেই চলেছে। কখনও বিপদের সময়, কখনও বা কোনো উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য। কেউ খেলতে খেলতে, কেউ বা পরীক্ষাগারে। কেউ আবার গোসলের সময় নগ্ন হয়ে কিছু আবিষ্কার করেছেন। আবিষ্কারের কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা সময় নেই।
আবিষ্কারক যখনই প্রয়োজন বুঝেছেন, তখনই তাঁর কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আজ এমনই কয়েকটি আবিষ্কারের কথা তুলে ধরব, যা হয়েছে অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত একটি জায়গায় — জেলখানায় ।
এগুলো কোনো জটিল বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নয়, কিন্তু যে জায়গায় এগুলো হয়েছে, সেই পরিস্থিতি তাদের বিশেষ করে তুলেছে। চলুন, দেখে নেই কিছু অদ্ভুত কিন্তু সত্যিকারের আবিষ্কার:
1. সিগারেট লাইটার
সিগারেট জেলখানার কয়েদিদের কাছে খুব জনপ্রিয়। তবে জেলে লাইটার বা দিয়াশলাই রাখা নিষিদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কয়েদি সমাধান খুঁজে পেয়েছিল।
আমেরিকার এক কয়েদি AA ব্যাটারি ও একটি তার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, যা দিয়ে তারা সিগারেট ধরাতেন। তারের মাঝখানে ইনসুলেশন ছিড়ে গেলে সেখানে সিগারেট লাগিয়ে আগুন ধরানো হতো।
2. ট্যাটু মেশিন
কেন কয়েদিরা এমন কিছু আবিষ্কার করেছিল, তা ভাবলে অবাক লাগে। তবে সময় কাটানো এবং নিজেদের মধ্যে নতুন কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই হয়তো এটি হয়েছিল।
একটি মোটরে AA ব্যাটারি সংযোগ করে এবং সুঁই ব্যবহার করে তারা একটি ট্যাটু মেশিন তৈরি করেছিল। আজকের ট্যাটু মেশিনের প্রাথমিক মডেল এটিই ছিল।
3. হিডেন শিভ (গোপন অস্ত্র)
একটি পবিত্র ক্রুশের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধারালো অস্ত্র — শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও সত্য।
জেলখানার কয়েদিরা ক্রুশের ভিতরে ধারালো অস্ত্র লুকিয়ে রাখত। কোনো শত্রু যখন ক্রুশের সামনে প্রার্থনা করতে বসত, তখন সেই ক্রুশ থেকেই বেরিয়ে আসত অস্ত্রটি!
4. রেজার কম্ব (সাজানো চিরুনি)
সারাদিন মাথা আচড়ানোর চিরুনি থেকে কীভাবে অস্ত্র তৈরি হয়? জেলখানায় সেটাই ঘটেছে।
কয়েদিরা শেভিং কম্বে তিনটি ব্লেড লাগিয়ে এমন একটি অস্ত্র তৈরি করেছিল যা তাদের দ্বন্দ্বের সময় ব্যবহার হতো। একটু মেজাজ খিচড়ে গেলেই এটি পকেট থেকে বের হয়ে আসত।
5. চাবুক / Cat o’ Nine Tails
প্রাচীন গ্লাডিয়েটরদের মতো কয়েদিরাও নিজেদের মতো করে একটি চাবুক তৈরি করেছিল।
লাঠির সাথে জুতার ফিতা, ইলেক্ট্রিক টেপ, লোহার টুকরো এবং ব্লেড লাগিয়ে তারা এমন একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র তৈরি করেছিল যা দিয়ে কয়েকজন জেল থেকে পালানোর চেষ্টাও করেছিল।
6. ডামি গান (কাঠের বন্দুক)
আজকাল বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে বা সিনেমার শুটিংয়ে ব্যবহৃত ডামি গানের প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল জেলখানায়।
কয়েদিরা কাঠ দিয়ে এমন একটি ডামি গান বানিয়েছিল যা দেখতে সত্যিকারের বন্দুকের মতো ছিল। এমনকি এটি ব্যবহার করে কয়েকজন জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল।
7. অ্যালকোহল স্টিল – হিটিং কয়েল
জেলখানায় মদ বানানো কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু এটি কীভাবে করা হবে?
কয়েদিরা AA ব্যাটারি ও একটি তার দিয়ে হিটিং কয়েল বানিয়েছিল। এটি ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন ফল গলিয়ে নেশায় ভুগত। আজকাল এর মডিফাইড ভার্সন ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক অ্যালকোহল তৈরিতে।
8. টোস্টার / হিটিং গ্রিল
কয়েদিরা কেবল অস্ত্র বা মদ নয়, রান্নার সরঞ্জামও তৈরি করেছিল।
টিনের ফয়েল, কাটা তার এবং হিটিং রড দিয়ে তারা এমন একটি টোস্টার বানিয়েছিল যা দিয়ে খাবার রান্না করা যেত। কিন্তু কিছু কারণে জেল কর্তৃপক্ষ এটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়।
সমাপ্তিতে: প্রয়োজন মানুষকে করে আবিষ্কারক
এগুলো শুনলে অবাক লাগে যে, কীভাবে কয়েদিরা সীমিত সামগ্রী দিয়ে এমন সব জিনিস বানাতে পেরেছিল। এটি প্রমাণ করে যে, মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে কতটা সৃজনশীল হতে পারে।
প্রাচীন কথা আছে: “ঠেলার নাম বাবাজি” । আমরা এখনও ঠেলায় পড়িনি। যেদিন পড়ব, সেদিন হয়তো আমরাও নতুন কিছু আবিষ্কার করব। তখন আর বিদেশি আবিষ্কারের দিকে তাকাতে হবে না।
সূত্রঃ টেকটিউনস
ইমরান