
ছবি:সংগৃহীত
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের ছোট ভাই এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাইফুর রহমান সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি লতিফুর রহমানের কন্যা সিমিন রহমান এবং তার স্ত্রী শাহনাজ রহমানের বিরুদ্ধে ট্রান্সকম গ্রুপের শীর্ষ নেতৃত্ব জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ তুলেছেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর (১ জুলাই ২০২০), তার মেয়ে সিমিন রহমান নকল বোর্ড রেজ্যুলেশন (নির্ণয়) তৈরি করে নিজেকে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেন। একই রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে শাহনাজ রহমান নিজেকে গ্রুপের চেয়ারপারসন হিসেবে ঘোষণা দেন। সাইফুর রহমানের অভিযোগ, এই বোর্ড রেজ্যুলেশনে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করা হয়।
২০ মে হাইকোর্ট মামলাটি আমলে নিয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের সব ধরনের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর কোম্পানি বেঞ্চ এই আদেশ দেন এবং মামলার আসামিদের ৩০ দিনের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেন। লিখিত আদেশটি প্রকাশিত হয় ২৪ মে।
সাইফুর রহমানের মামলায় বলা হয়েছে, লতিফুর রহমান মৃত্যুর আগে ১৩ জুন ২০২০ তারিখে নাকি তার ২৩,৬০০ শেয়ার সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেন—এর মধ্যে সিমিন পান ১৪,১৬০ শেয়ার, আরশাদ ও শাহজরেহ পান ৪,৭২০ শেয়ার করে। তবে সাইফুর রহমানের দাবি, এই বণ্টনের কোন বৈধতা নেই এবং সংশ্লিষ্ট ফর্ম-১১৭ এবং বোর্ড রেজ্যুলেশন জাল।
রেজ্যুলেশনে বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে—সাইফুর, আতিকুর রহমান, আরশাদ এবং শাহজরেহ—তারা সবাই অস্বীকার করেছেন ওই সভায় উপস্থিত থাকার কথা এবং জানিয়েছেন, তাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। সাইফুর ও আতিকুর ইতোমধ্যে পিবিআই-এর কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ১৩ জুন ২০২০ কোনো বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, লতিফুর রহমানের মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যে—৪ জুলাই ২০২০—সিমিন ও শাহনাজ নিজেরা নিজেদের চেয়ারপারসন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে ঘোষণা দেন, যা কোম্পানি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
২০২০ সালের আগস্টে শাহনাজ নাকি ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্স থেকে কোনো বৈধ বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই ট্রান্সকম লিমিটেডের ৯,০০০ শেয়ার নিজের নামে স্থানান্তর করেন। এছাড়া, তিনি মাত্র ৯ দিন আগে মারা যাওয়া আরশাদের পরিবর্তে সাবেক কোম্পানি সেক্রেটারি মো. কামরুল হাসানকে ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন, যা কোম্পানির গঠনতন্ত্রের (Article 26) বিরোধী।
২০২৩ সালের ২৫ জুন অনুষ্ঠিত এক বোর্ড মিটিংয়ে সাইফুর ও শাহজরেহ এই শেয়ার হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানালেও তা বোর্ডের অফিসিয়াল রেজ্যুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে মামলায় উল্লেখ আছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, শারিয়াহ আইন অনুযায়ী লতিফুর রহমানের সন্তানদের মধ্যে সম্পদের সঠিক বণ্টন হয়নি। সিমিন রহমান অনুপাতে বেশি শেয়ার দাবি করায় অন্য উত্তরাধিকারীরা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ট্রান্সকম গ্রুপের উত্তরাধিকার ঘিরে পারিবারিক বিরোধ আরও চরমে পৌঁছায় যখন ২২ মার্চ ২০২৪ তারিখে শাহজরেহ হক একটি হত্যা মামলা করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে তার ভাই আরশাদকে শ্বাসরোধ বা বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে সম্পদের দাবিকে ঠেকাতে।
এর আগেই, ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি গুলশান থানায় ট্রান্সকমের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও নথি জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।বর্তমানে সিমিন রহমান পুরো ট্রান্সকম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। এই গ্রুপের আওতায় রয়েছে ১৮টি কোম্পানি, যার মধ্যে ট্রান্সকম ইলেক্ট্রনিক্স, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ও পেপসিকো অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত বাজারমূল্য প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে এসকেএফ-এর মূল্য একাই ১৫,০০০ কোটি টাকার বেশি।
ছামিয়া