
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্ব যখন সবুজ জ্বালানির নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন ইউরোপের একটি দেশ নীরবে হয়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অগ্রদূত। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা ব্যবহৃত ব্যাটারিকে মাটিতে “বীজের মতো পুঁতে” রূপান্তর করা যায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য—তারা পুরনো ব্যাটারি থেকে তৈরি করছেন পরিষ্কার শক্তি, অর্থাৎ পুনর্নবীকরণযোগ্য মিথেন গ্যাস!
কিভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
জাদুবিদ্যা নয়, এটি বিজ্ঞানের কারুকাজ। ব্যাটারি ব্যবহারের পর যেসব ধাতব পদার্থ অবশিষ্ট থাকে—যেমন নিকেল বা অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল থেকে পাওয়া অ্যালুমিনা—সেগুলোকেই পুনরায় কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের “ন্যানোক্যাটালিস্ট”, যা হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে রূপান্তর করে মিথেনে। এই মিথেন গ্যাসই ব্যবহার করা যাবে শিল্প কিংবা পরিবহনখাতে জ্বালানি হিসেবে। এক কথায়—বর্জ্য থেকে শক্তি, আধুনিক যুগের পরিবেশবান্ধব রূপান্তর!
বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পরিবেশবান্ধব সমাধান
ব্যাটারি যতই আধুনিক হোক, ব্যবহারের পর এর অবনতি পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। প্রতিবছর কোটি কোটি ব্যাটারি জমা হয়ে পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করে। অথচ অস্ট্রিয়ার এই উদ্ভাবন সেই সমস্যা থেকেই তৈরি করেছে সম্ভাবনার এক নতুন দরজা। পুরনো ব্যাটারি এবার আর ফেলনা নয়—বরং জ্বালানির উৎস!
এই জ্বালানি কাদের কাজে লাগবে?
এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে শিল্পকারখানা ও যানবাহনের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারবে। এটি কেবল ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রেই বিপ্লব নয়, বরং কার্বন নির্গমন কমানোর দিক থেকেও এক বিশাল পদক্ষেপ।
বর্তমানে পুরনো ব্যাটারির কী হয়?
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনো ব্যাটারি নিষ্পত্তির কার্যকর উপায় বের করতে পারেনি। সাধারণত তিনটি পথই অনুসরণ করা হয়:
আংশিক রিসাইক্লিং: ব্যাটারির দামী উপাদান (যেমন: নিকেল, কোবাল্ট) সংগ্রহ করে বাকি অংশ ফেলে দেওয়া হয়। এটি ব্যয়বহুল এবং সবসময় কার্যকর নয়।
সংগ্রহ করে রেখে দেওয়া: অনেক দেশই পুরনো ব্যাটারি জমিয়ে রাখে ভবিষ্যতের কোনো সমাধানের আশায়।
ডাম্পিং বা রপ্তানি: সবচেয়ে ভয়াবহ পথ—উন্নত দেশগুলো ব্যাটারি রপ্তানি করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে নিরাপদভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব দেশ দূষণে ভুগছে।
অস্ট্রিয়ার এই নতুন পদ্ধতি এই ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার এক কার্যকর বিকল্প।
পরিবেশের জন্য কতটা উপকারী হবে?
এই পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে মিথেন, যার মাধ্যমে পরিবেশে গ্যাস নির্গমন কমানো সম্ভব। এটি শুধু পুনর্ব্যবহার নয়, বরং একে একটি পুনরাবৃত্ত শক্তি চক্রে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে এটি গ্যাস, ধোঁয়া কিংবা তেলের চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব বিকল্প।
প্রতিযোগিতা কেমন?
সিলিকন ভ্যালি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিয়ে গর্ব করে, চীন বড় মাপের উৎপাদনে রাজত্ব করছে—কিন্তু অস্ট্রিয়া যা করেছে তা হলো নতুন কিছু আবিষ্কারের বদলে পুরনো জিনিসকে পুনরায় কাজে লাগানোর চমৎকার পদ্ধতি। তারা দেখিয়েছে, সবসময় নতুন কিছু বানাতে হয় না—পুরনো জিনিসকেও ব্যবহার করে বদলে ফেলা যায় ভবিষ্যৎ।
পরিশেষে...
এখন সময় এসেছে, এলন মাস্ক আর চীনের দিকে তাকিয়ে থাকা বন্ধ করে অস্ট্রিয়ার মতো নতুন ভাবনার দিকে নজর দেওয়ার। কারণ, ভবিষ্যতের টেকসই সমাধান হয়তো লুকিয়ে আছে আজকের বর্জ্যের মধ্যেই।
তথ্যসূত্রঃ https://unionrayo.com/en/austria-batteries/
মারিয়া