
সংগৃহীত ছবি
ফেরাউন, যাকে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অভিশপ্ত বলেছেন। সেই ফেরাউনের লাশ দেখে মুসলিম হয়েছেন এক খ্রিস্টান বিজ্ঞানী। ড. মারিস বুকাইলি, যিনি দীর্ঘসময় ফেরাউনের লাশ নিয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
কী ছিল তার গবেষণায়, কেনই বা মুসলিম হয়েছেন তিনি। ফেরাউনের ঘটনা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। ফেরাউন কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়, প্রাচীন মিশরীয় শাসকদের বলা হতো ফেরাউন বা ফারাও।
একবার ফেরাউনের গণকরা তাকে বললো বনী ইসরাইলদের ঘরে এমন এক ছেলে জন্ম নিবে যে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। সে সময় মিশরে বনী ইসরাইলরা দাস হিসেবে বাস করতো। গণকদের কাছে একথা শুনে ফেরাউন নির্বিচারে বনী ইসরাইলদের ঘরে জন্ম নেয়া ছেলে শিশুদের হত্যা করতে লাগলো। সে সময় জন্ম নিলেন হযরত মূসা (আ.)। মূসা (আ.) এর মা আল্লাহর উপর ভরসা করে একটি ঝুড়িতে করে তাকে নীলনদে ভাসিয়ে দিলেন। ঘটনাক্রমে সেই ঝুড়ি ফেরাউনের প্রাসাদে আসে এবং ফেরাউনের স্ত্রী তাকে সন্তানের মতো লালনপালন করতে থাকেন। মূসা (আ.) বড় হওয়ার পর ঝগড়া থামানোর জন্য এক ব্যক্তিকে ঘুষি দিলে তিনি মারা যান। প্রাণভয়ে তিনি মিশর থেকে পালিয়ে যান। এর বহু বছর পর নবুওয়্যত প্রাপ্ত হয়ে তিনি ফিরে আসেন এবং ফেরাউনকে ইসলামের দাওয়াত দেন। ফেরাউন তো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেইনি উল্টো মূসা (আ.) এবং তার সাথীদের হত্যা করতে তাদের পিছু নেন। এমন সময় সাগরের সামনে আসলে আল্লাহ মূসা (আ.) কে হুকুম দেন সাগরে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে। আঘাতের ফলে সাগর দুভাগ হয়ে মাঝখানে একটি রাস্তা তৈরি হয় এবং মূসা (আ.) তার সাথীদের নিয়ে সাগর পাড়ি দেন। ফেরাউনও পিছু পিছু আসে কিন্তু সে পানিতে নামার পর সাগর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় এবং ফেরাউন ডুবে মারা যায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "আজ আমি তোমার মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখবো তাদের জন্য উদাহরণ হিসেবে, যারা তোমার পরে আসবে। আর অধিকাংশ লোকই আমার উদাহরণ সম্পর্কে গাফেল।"
পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে ফেরাউনের লাশ খুঁজে পায় বিজ্ঞানীরা। তার নাম ছিল দ্বিতীয় রামেসেস। আশ্চর্যের বিষয় হল গবেষকরা দেখেন লাশটি তিন হাজার তিনশ বছরের, অথচ সেটি পঁচেনি। কোনরকম কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভ ছাড়াই ভালো ছিল। এরপর শুরু হয় গবেষণা। লাশটি রাখা হয় মিশরের একটি জাদুঘরে। এর কিছু বছর পর ফ্রান্সের সরকার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য লাশটি মিশর থেকে ফ্রান্সে আনেন। এই গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন ফ্রান্সের এক গবেষক ড. মারিস বুকাইলি। ফ্রান্সের একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গবেষণায় তিনি দেখতে পান, ফেরাউনের লাশ না পঁচার কারণ ছিল লবণ। লাশের গায়ে তিনি প্রচুর লবণ দেখতে পান। যা দীর্ঘ সময় সাগরে ডুবে থাকার কারণে হয়। এছাড়াও লাশটির হাতে পায়ে তিনি বড় আঘাতের চিহ্ন দেখেন, যা সাধারণত বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় হয়। এমন সময় কেউ একজন মারিস বুকাইলি-কে বলেন মুসলিমদের কোরআনে এমন একজন ব্যক্তির কথা বলা আছে, যে সাগরে ডুবে মারা গেছে। তিনি খুব অবাক হলেন এবং শুরু করলেন গবেষণা। প্রথমে তিনি তাওরাত এবং বাইবেল পড়লেন। সেখানে ফেরাউন মূসা (আ.) এর পিছনে যাওয়া এবং সাগরে ডুবে মারা যাওয়া পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা থাকলেও লাশ সংরক্ষণ নিয়ে কোন কিছু বলা ছিল না। পরে তিনি দেখলেন, কুরআনে খুব সূক্ষ্মভাবে ফেরাউনের ঘটনা বর্ণনা করা আছে। এবং আল্লাহ ফেরাউনের লাশকে অবিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন হিসেবে রেখে দিয়েছেন। বলা হয় এই ঘটনার পর তিনি ইসলাম কবুল করেন। যদিও এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার লেখা বই 'বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান' থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
JF