
ছবি: প্রতীকী
রাজধানীর রাজপথে দাবি-দাওয়ার ছলছুতোয় আর সড়ক অবরোধ করে করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি সহ্য করবে না সরকার। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে হঠাৎ করে সড়ক দখল, যান চলাচলে বাধা ও জনজীবনে ভোগান্তির অবসান ঘটাতে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে প্রশাসন। সড়কে নেমেই অবরোধ সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীকে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ‘যে কেউ যখন-তখন রাস্তা অবরোধ করে চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে, এতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।’ তবে তিনি জানান, জনদুর্ভোগ হবে না, এমন স্থানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সরকার গঠনের পর থেকে প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও হঠাৎ যত্রতত্র সড়ক অবরোধ করছেন যে কেউ। যানজট আর দুর্ভোগে বিপর্যস্ত হচ্ছে নগরবাসী। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আসছিল। ডিএমপি কমিশনার বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, জনদুর্ভোগ এড়িয়ে যৌক্তিক দাবি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে। কিন্তু সরকারের সহনশীলতাকে দুর্বলতা মনে করে সড়ক অবরোধ করা রীতিমতো ডালভাতে পরিণত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।
সূত্র জানায়, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ডিএমপি ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছে। সড়ক অবরোধের নামে জনদুর্ভোগ কমাতে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। বিষয়টি জানানো হলে দলগুলো থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসবে ডিএমপি। শিগগিরই ডিএমপি সদর দপ্তরে ডাকা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের। সেখানে সরকারের উদ্যোগের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে এবং জনদুর্ভোগ এড়াতে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
রাজধানীতে ৪০টি মাঠ চিহ্নিত করা হয়েছে সভা-সমাবেশের জন্য। এর মধ্যে রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক মাঠ। মাঠগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন শুরু করেছেন ডিএমপির কর্মকর্তারা। সেগুলোর সার্বিক অবস্থা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে। সেসব স্থানে সব ধরনের সভা-সমাবেশ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরবে ডিএমপি।
এক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেবল ছুটির দিনে সমাবেশ করার জন্য দলগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হবে। কোনো অবস্থাতেই কর্মদিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন সমাবেশ না করা হয়, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে সিগন্যাল পেয়েছে ডিএমপি।
জনদুর্ভোগ কমাতে এরইমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। সর্বশেষ শনিবার জানানো হয়, আগারগাঁওয়ের এনবিআর ও বিডা কার্যালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। এর আগেও সচিবালয় এলাকা এবং যমুনার আশপাশে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
কঠোর অবস্থানের প্রাথমিক ইঙ্গিত মিলেছে গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। সেখানে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ জলকামান, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানায়, জনদুর্ভোগ রোধেই এই পদক্ষেপ।
রাকিব