
আসাম সরকার কর্তৃক ঘোষিত “বিদেশি নাগরিকদের” দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে শত শত মুসলিমকে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতের অন্য কিছু বিজেপি-শাসিত রাজ্যও একই পথে হাঁটছে।
মঙ্গলবার, ২৪ জুন আল জাজিরার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে ।
৬৭ বছর বয়সী সাইকেল মেকানিক উফা আলী ৩১ মে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে নিজের বাড়িতে ফিরে যান চার দিন বাংলাদেশে আটকে থাকার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার পর। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে “বাংলাদেশ” শব্দটা কেবল একটি অপমানসূচক শব্দ হিসেবেই শুনেছেন।
এই ঘটনাটি শুরু হয় ২৩ মে, যখন পুলিশ তাঁকে আসামের মোরিগাঁও জেলার কুয়াদল গ্রামে ভাড়া বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এটি ছিল আসাম সরকার ঘোষিত “বিদেশি নাগরিক” দমন অভিযানের অংশ। গত এক শতাব্দী ধরে বাংলাভাষী জনগণের অভিবাসন ও বসতির ফলে আসামের স্থানীয় আদিবাসী, মূলত আসামি ভাষাভাষী জনগণের সঙ্গে জাতিগত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি আসামে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আসামে ৩ কোটিরও বেশি মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মুসলিম, যা ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
আলী হচ্ছেন সেই ৩০০-র বেশি মুসলিমদের একজন, যাদের আসাম থেকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, “এই ঠেলাধাক্কা আরও জোরদার করা হবে। রাজ্যকে রক্ষা করতে হলে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।”
২৩ মে পুলিশ তাঁকে ধরে নেওয়ার পর, আলীকে ২০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে আসামের গোলপাড়া জেলার মাতিয়া ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আটক কেন্দ্র।
তিন দিন পর, ২৭ মে ভোরে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আলীসহ ১৩ জনকে একটি ভ্যানে করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায়।
“বিএসএফ আমাদের জোর করে ওপারে পাঠাতে চাইছিল, কিন্তু বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) এবং স্থানীয়রা বলছিল, তারা আমাদের নেবে না, কারণ আমরা ভারতীয়,” বলেন আলী।
সীমান্তের মাঝামাঝি ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’-এ আলীদের দল ১২ ঘণ্টা হাঁটু পানি ও খোলা জায়গায় কোনো খাবার বা আশ্রয় ছাড়াই কাটায়।
আলীর একটি ছবি, যেখানে তিনি জলকাদায় বসে আছেন, চোখে আতঙ্ক – তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বলেন, “আমরা নীল আকাশের নিচে নরক দেখেছি, আমরা দেখেছি জীবনের আলো নিভে যাচ্ছে।”
“আমরা যখন অনুরোধ করছিলাম আমাদের না পাঠাতে, তখন তারা রাবার বুলেট ছুড়েছে। আমাদের জন্য কোনো দেশই ছিল না – এ যেন কোনো ভূখণ্ডের নাগরিকই ছিলাম না।”
গত মাস থেকে আসামের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসলিমদের আটক করে সীমান্তে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্ত শহর রৌমারীর সাংবাদিক যতেন চন্দ্র দাস জানান, তিনি বিএসএফ সদস্যদের “ভারতীয় নাগরিকদের” দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে দেখেছেন।
বিএসএফ অবশ্য দাবি করে, তারা শুধু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছে।
শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে আলীকে মেঘালয়ের সীমান্তে ফেরত পাঠানো হয়, যেখান থেকে তিনি ১০ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে ও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফেরেন।
বিজেপি মুখপাত্র বলেছেন, হিন্দুদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে না, কারণ তারা সেখানে “ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার” হতে পারেন। বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই অভিযান শুধুমাত্র মুসলিমদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও পার্সিদের দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ দেয়, যদি তারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য এই সুযোগ নেই।
সূত্র - https://www.aljazeera.com/news/2025/6/24/foreigners-for-both-nations-india-pushing-muslims-back-to-bangladesh
সানজানা