ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

তিন পক্ষই বলছে, ‘আমরাই জিতেছি’! ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কে আসলে পেল কতটা?

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ২৪ জুন ২০২৫

তিন পক্ষই বলছে, ‘আমরাই জিতেছি’! ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে কে আসলে পেল কতটা?

দু’সপ্তাহের উত্তাল সংঘর্ষ, রক্তপাত, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আর পারমাণবিক বোমার গর্জনের পর অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ইঙ্গিত। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। আর এর মধ্যেই শুরু হয়েছে আরেকটি যুদ্ধ, প্রচারণার যুদ্ধ। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই যুদ্ধ থেকে অংশ নেওয়া তিন পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরান প্রত্যেকেই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে।

এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নাটকীয় ঘোষণার মাধ্যমে। তিনি জানান, “ইসরায়েল ও তেহরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” অথচ এই ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তেই ইরান ইসরায়েলের শহরগুলোর দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর আওতায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। ফলে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় উদ্বেগ, এটা কি বড় কোনো যুদ্ধে রূপ নিতে চলেছে?

এমন উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এবং এরপরই শুরু হয় বিজয় প্রচারণা।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা চূর্ণ করে দিয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, “ওদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।” আবার তিনি দাবি করেছেন, “একজন আমেরিকানও মারা যায়নি।” এমনকি কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলার পরও ট্রাম্প প্রতিশোধ না নিয়ে উল্টো বলেন, “ধন্যবাদ ইরান, আগাম জানিয়ে দেওয়ার জন্য।”

ইসরায়েলও চুপ নেই। তারা বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগেই তারা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও গোয়েন্দা কাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কয়েকজন জেনারেলকে হত্যা করে তারা দেখিয়ে দিয়েছে তারা ভয় পায় না। আর সবচেয়ে বড় লাভ, যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা।

অন্যদিকে ইরানও বলছে, তারা মাথা নত করেনি। তাদের বক্তব্য, তারা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়েছে, লড়েছে, এবং নিজেদের শর্তে যুদ্ধ থামিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আগাম বার্তা দিয়েই কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে যাতে কোনো প্রাণহানি না ঘটে। এটা ছিল একধরনের ‘কৌশলগত প্রতিরোধ’, যা ক্ষতি না করেও নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, তিনটি দেশই নিজেদের জনগণকে বোঝাতে চাইছে, তারা জয়ী। এই যুদ্ধ কেবল গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটা ছিল প্রচারণার, কৌশলের ও ইমেজ রক্ষার লড়াই।

তবে, শান্তি কি আসলেই স্থায়ী হবে?
বিশ্ব এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তেহরান তা অস্বীকার করছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, এখনো নিশ্চিত নয় তারা ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ কতটা রয়েছে, কিংবা ভবিষ্যতে তা আবার চালু হবে কি না।

এই মুহূর্তে যেটুকু শান্তি এসেছে, সেটি অনেকটাই ‘ভঙ্গুর’। কূটনীতি যদি দ্রুত সক্রিয় না হয়, এই সংঘাত আবারও ফিরে আসতে পারে আরও ভয়াবহ রূপে।

×