
ছবিঃ সংগৃহীত।
আল্লাহ সবকিছু নিয়তে লিখে রেখেছেন। যে অমুক লোক ভালো হবে না খারাপ হবে, সে কাউকে খুন করবে কী করবে না, কাউকে ধর্ষণ করবে কী করবে না অথবা চুরি করবে কী করবে না, ভালো কাজ করবে কী করবে না,সে বেহেশতে যাবে না দোজখে সবকিছুই আগে লিখা থাকলে আমরা কি করবো? এখানে কার দোষ?
যদি আমি কাউকে খুন করি, আল্লাহ আমার কপালে লিখেছেন, আমি খুন করবো , খুন করে ফেললাম ।তাহলে এ দোষটা কার ,দোষটা আল্লাহর। তাহলে আমাকে কেন দোযখে পাঠানো হবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে ড. জাকির নায়েক বলেন , “আমাদেরকে আগে নিয়তির ধারণা বুঝতে হবে। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা আগে থেকে লিখে রেখেছেন একটা মানুষ কবে জন্মাবে, সে কোন দেশে জন্মাবে, কখন মারা যাবে, কোন দেশে মারা যাবে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘যখন কোনো শিশু জন্ম নেয় তার কর্মগুলো আমি তার গৃবালগ্ন করে দেই ।’
একজন মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ জানেন সে কি কি করবে, ভালো না খারাপ, ঠিক না বেঠিক, সে বেহেশতে যাবে না দোযখে যাবে।
ধরেন, একটা ক্লাসে একজন শিক্ষক পড়াচ্ছেন ১০০ জন ছাত্রকে প্রায় ১ বছর ধরে। পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষক অনুমান করলেন যে এই ছাত্র এইবারের পরীক্ষায় ফাস্ট হবে, এই ছাত্র পাবে সেকেন্ড ক্লাস ,এই ছাত্র করবে ফেল। এটা আমি উদাহরণ হিসেবে বলছি। এর কিছুদিন পরে পরীক্ষা হয়ে গেল এবং অনুমান করা ছাত্র ফাস্ট, সেকেন্ড ক্লাস এবং ফেল করেছে।
এখন আমি আপনাদের প্রশ্ন করি, যে ছাত্র ফেল করেছে সে কি শিক্ষককে গিয়ে বলবে আপনি বলেছিলেন যে, আমি ফেল করবো তাই ফেল করেছি।
এখানে দোষটা কার ? শিক্ষক না ছাত্রের? ছাত্রের ।
শিক্ষক অনুমান করেছিলেন এই ছাত্র ঘুরে বেড়ায়, ঠিকমতো ক্লাসে আসে না , সিনেমা দেখতে যায় এজন্য সে ফেল করবে।
এই ছাত্র মোটামুটি মাঝারি,সেকেন্ড ক্লাস পাবে। এই ছাত্র মেধাবী ,অনেক পরিশ্রম করে তাই শিক্ষক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে অনুমান করেছিলেন এই ছাত্র হবে ফাস্ট , এই ছাত্র সেকেন্ড ক্লাস এবং এই ছাত্র ফেল করবে। তারপর আসলে তাই হলো। শিক্ষক অনুমান করেছিলেন তার মানে এই নয় যে দোষটা শিক্ষকের হবে।
শিক্ষক সবাইকে পড়িয়েছেন সঠিকভাবে ,সমানভাবে একইভাবে আল্লাহ তায়ালার আছে ইলমে গায়েব। তিনি ভবিষ্যৎ সর্ম্পকে জানেন।
কিছু জিনিস ঠিক করা আছে যে এই লোকটা জন্মাবে অমুক দেশে অমুক দিনে আর সে মারা যাবে অমুক দেশে, অমুক দিনে ইত্যাদি ইত্যাদি। তার পরিবেশ ধনী হবে না গরিব হবে। তবে পছন্দটা এখানে আপনার যেমন, ধরেন দ্বাদশ পাশ করার পরে আপনার অপশন ছিল হয়তো আপনি ইঞ্জিনিয়ার হবেন, হয়তো ডাক্তার হবেন অথবা একজন আইনজীবী , এখানে পছন্দ আপনার।
আপনি ঠিক করলেন আপনি হবেন একজন ইঞ্জিনিয়ার । এখন আল্লাহ এটা আগে থেকে জানেন যে দ্বাদশ পাশ করার পরে আপনি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চেষ্টা করবেন তাই আল্লাহ আগে লিখে রেখেছেন ব্যাপারটা এমন নয় যে আল্লাহ লিখে রেখেছেন বলে আপনি বেছে নিচ্ছেন । যেহেতু আপনি এটা বেছে নিচ্ছেন তাই আল্লাহ আগে লিখে রেখেছেন। এখানে পছন্দ আপনার তবে আল্লাহ আপনার পছন্দ জানেন।
যেমন ধরেন একটা রাস্তার মোড়ে আসলেন সামনে পাঁচটা রাস্তা , রোড নাম্বার ১, ২ ,৩ ,৪ ,৫ । এখানে পছন্দ আপনার। আপনি বেছে নিতে পারেন রোড নাম্বার ১,২,৩,৪,৫। আপনি গেলেন রোড ২ এ। এটা আগে থেকে লেখা আছেই আপনার নিয়তিতে আপনি যাবেন ২ নাম্বার রোডে। ব্যাপারটা এমন নয় যে আল্লাহ লিখেছেন বলে আপনি করছেন যেহেতু আপনি এটাই বেছে নিবেন তাই আল্লাহ আগেই লিখে রেখেছেন। তাহলে পছন্দ আপনার , আপনি চাইলে টাকা অর্জন করতে পারেন, ভালো কাজ করার মাধ্যমে , হালাল উর্পাজনে অথবা চুরি করে ,হারাম উপায়ে । ধরেন আপনি চুরি করলেন এটা আপনার সিদ্ধান্ত তবে আল্লাহ আগে থেকে জানেন যে এই লোকটা সহজে টাকা পেতে চায় তাই চুরি করবে তাই আল্লাহ আগে লিখে রেখেছেন যে এই লোকটা ২৫ বছর বয়সে চুরি করবে এখানে দোষটা কার আসলে।
সিদ্ধান্ত আপনার , আল্লাহ তায়ালা মানুষদের দিয়েছেন স্বাধীন ইচ্ছা, আপনি আল্লাহ তায়ালাকে দোষ দিতে পারবেন না আপনার পাপের জন্য। যদি আপনি দোযখে যান যাবেন আপনার পাপ কাজগুলোর জন্য আর যদি বেহেশতে যান সেটার কারণ হবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা’র অসীম করুণা।”
মো. মহিউদ্দিন