
ছবি: সংগৃহীত
৯০ বছরে পা রাখলেন দেশের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ ও এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। জন্মদিনে দেশ ও সমাজ নিয়ে তার অভিব্যক্তি ছিল গভীর, বেদনাবিধুর ও পরিশীলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে পূর্ণ।
বিক্রমপুরে জন্ম, কিন্তু শৈশব কেটেছে পদ্মা বিধৌত রাজশাহীতে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছিলেন কলকাতায়। এক বছরেরও বেশি সময় পর দেশভাগের অভিঘাতে চলে আসেন ঢাকায়। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে চলে আসতে হবে, এটা কেউ ভাবেনি। দেশভাগ ছিল বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের পর দ্বিতীয় বৃহৎ দুর্ঘটনা।’
বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, নেতৃত্বের অভাব রয়েছে—তবে তার পেছনে রয়েছে যৌক্তিক কারণ।
‘মানুষের ভেতরে ভালো জিনিস আছে, কিন্তু সেটি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না। কারণ, নেতৃত্বের অভাব। নেতৃত্ব এমনি এমনি আসে না, সেটা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে তৈরি হয়। আর আন্দোলনের জন্য দরকার সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি।’
তাঁর মতে, ‘সংস্কৃতি সভ্যতার চেয়ে বড়, গভীর এবং স্থায়ী। সভ্যতার চাইতে সংস্কৃতির বিস্তারও বেশি। সুতরাং আগামীর বাংলাদেশে সংস্কৃতিকে দিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব।’
‘বাবা ছিলেন পিতৃতান্ত্রিক, মা ছিলেন গণতান্ত্রিক’
জীবনের এই পর্যায়ে এসে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, তিনি যতটা না পিতার, তার চেয়ে বেশি মায়ের সন্তান। বাবা-মা প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার পিতা ছিলেন পিতৃতান্ত্রিক। এখন বুঝি, পিতৃতান্ত্রিকতার জায়গাটা কতটা সংকীর্ণ। সমাজ বিবর্তনের মধ্যেও সেই মানসিকতা ভাঙেনি। সামন্তবাদের মধ্যেও ছিল, প্রতিবাদের মধ্যেও আছে।’
‘আমার মা ছিলেন গণতান্ত্রিক। তার কাছে কোনো কৃত্রিম উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ছিল না।’
সহধর্মিণী নাজমা জেসমিন চৌধুরীর মৃত্যু তাঁর জীবনে এক শূন্যতা তৈরি করেছে। তবে ব্যক্তি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দুঃখের খাতায় খুব বেশি কিছু নেই। শুধু একটিই আক্ষেপ, ‘সময়টা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। আমি যে ব্যক্তিগত সময় পেয়েছিলাম, সেটাকে হয়তো আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেত।’
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=_RTF-lVMvsE
রাকিব