
ছবি: প্রতীকী
বিগত কোটি কোটি বছর আগে যেমন ডাইনোসররা তাদের দৈহিক প্রভাব দিয়ে গঠন করত পৃথিবীর প্রকৃতি, আজকের দিনে সেই ভূমিকা পালন করছে মানুষ। তবে বিশাল আকৃতির নয়, বরং প্রভাবের দিক থেকে মানুষ আজকের বিশ্বের আধুনিক ডাইনোসর হয়ে উঠেছে—এমনটিই বলছে সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
‘প্যালিওন্টোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্থলজ প্রাণীদের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটছে উদ্ভিদের ফল ও বীজের আকারেও। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে প্রাণীদের প্রভাব, বিশেষ করে সেইসব প্রাণী যারা বনের গঠন বদলে দেয়।
গবেষণায় বলা হয়, প্রাচীন যুগে ডাইনোসরের মতো বিশালদেহী প্রাণীরা যখন ঘন বনে চলাচল করত, তখন তারা গাছপালা ভেঙে ফেলার মাধ্যমে সূর্যের আলোকে মাটিতে পৌঁছাতে সাহায্য করত। এর ফলে গাছের বড় হয়ে ওঠার প্রয়োজন হতো না, এবং ছোট বীজেই গাছ জন্মাত। কিন্তু যখন বন ঘন হয়ে যেত, সূর্যের আলো কম পৌঁছাত, তখন গাছ বড় হতে বাধ্য হতো এবং স্বাভাবিকভাবেই বড় বীজের চাহিদা বাড়ত।
ডাইনোসর বিলুপ্তির পর বনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চলে আলো কম পৌঁছানো শুরু করে, ফলে লম্বা গাছ ও বড় বীজের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তনকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং’, যেখানে প্রাণীরাই প্রকৃতির গঠন বদলাতে সহায়তা করে।
এই প্রসঙ্গে গবেষকরা তুলনা করছেন মানুষের সঙ্গে। যদিও মানুষের দৈহিক গড়ন ডাইনোসরের মতো বিশাল নয়, কিন্তু প্রকৃতির ওপর প্রভাবের মাত্রায় মানুষ আজ অনেকাংশেই তাদের চেয়ে এগিয়ে। বন উজাড়, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শহরায়ণ ও কৃষি সম্প্রসারণ—সবকিছু মিলিয়ে মানুষ আজ প্রকৃতির অভ্যন্তরীণ গঠন বদলে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিদ ক্লাইভ জি. জোনস বলেন, ‘মানুষের কারণে বনভূমির গঠন বদলে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু বন কাটা নয়, বিদেশি গাছ লাগানো, গ্রামকে শহরে রূপান্তর, রাস্তা তৈরি—সবকিছুই পরিবেশের স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন করছে।’
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি কেমন হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে প্রকৃতির আচরণও আগের নিয়মে চলছে না।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—মানুষ হয়তো দেখতে ডাইনোসরের মতো নয়, কিন্তু তার কর্মকাণ্ডে যে ডাইনোসরের মতোই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিচ্ছে, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।
সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান।
রাকিব