মার্কিন আধিপত্য কি শেষের পথে? এআই যুদ্ধে হঠাৎ বাজিমাত চীনের!

চীনের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল DeepSeek বিশ্ববাজারে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি এই চ্যাটবট এতটাই শক্তিশালী যে, একদিনেই যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত চিপ নির্মাতা Nvidia-র বাজারমূল্য কমে যায় প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। যা এখন পর্যন্ত মার্কিন স্টক মার্কেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতির রেকর্ড।

কী ঘটল হঠাৎ?

চীনের ডেভেলপাররা DeepSeek নামে একটি AI চ্যাটবট উন্মোচন করে, যা OpenAI-এর GPT-4 এর মতোই শক্তিশালী বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ GPT-4 তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। DeepSeek এ কাজ হয়েছে মাত্র ২,০০০টি Nvidia চিপ দিয়ে, যেখানে GPT-4 এর মতো মডেলগুলোর জন্য লাগে প্রায় ১৬,০০০ চিপ।

এতে বোঝা যায়, সীমিত খরচ আর কম রিসোর্সে চীন যা করেছে, তা অনেক বেশি কার্যকর এবং ব্যয়সাশ্রয়ী।

কেন একে বলা হচ্ছে ‘AI-এর চমকে ওঠার মুহূর্ত’?

বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ড্রিসেন একে বলছেন “AI-এর চমকে ওঠার মুহূর্ত”। ১৯৫৭ সালে রাশিয়া যখন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক’ মহাকাশে পাঠায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে। আজ ঠিক তেমনই পরিস্থিতি তৈরি করেছে DeepSeek।

মার্কিন আধিপত্য কি ঝুঁকিতে?

যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল উন্নত প্রযুক্তির চিপ যেন চীনের হাতে না পড়ে। কিন্তু চীনের ডেভেলপাররা সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কম খরচে উন্নত AI মডেল বানিয়ে ফেলায় প্রশ্ন উঠছে—মার্কিন নেতৃত্ব কি আর নিরাপদ?

যেখানে মার্কিন কোম্পানিগুলো শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে, সেখানে DeepSeek দেখিয়ে দিল—সৃজনশীলতা ও কৌশল দিয়েও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।

আর কী কী ঘটছে?

• DeepSeek মাত্র একদিনেই সাইন-আপ বন্ধ করে দেয়, কারণ "ম্যালিসিয়াস অ্যাটাক" হয়েছে বলে দাবি। যদিও কেউ কেউ বলছে, এটা আসলে অতিরিক্ত চাহিদা সামলাতে না পারার অজুহাত।

• TikTok নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং Microsoft-এর আগ্রহ—এই মুহূর্তে মার্কিন-মূল্যবান প্রযুক্তি খাতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে।

• পরিবেশবিদরা বলছেন, বড় AI মডেল তৈরি করতে অনেক শক্তি খরচ হয়। কিন্তু DeepSeek-এর মতো কম রিসোর্স-নির্ভর মডেলগুলো এই সমস্যা কিছুটা কমিয়ে আনতে পারে।

DeepSeek দেখিয়ে দিল, AI প্রতিযোগিতা শুধু অর্থের খেলা নয়—সৃজনশীলতা, দক্ষতা আর দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিযোগিতা।

ঠিক যেমন ১৯৫৭ সালের স্পুটনিক যুক্তরাষ্ট্রকে চাঁদে পাঠিয়েছিল, তেমনি এই AI-ঝড় হয়তো আমাদের নিয়ে যাবে নতুন কোনো প্রযুক্তির যুগে। তবে তার আগে, হয়তো শুনতে হবে অনেকগুলো "পপিং সাউন্ড"—বুদবুদের মতো ফেটে পড়া বিনিয়োগের খবর।