ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

‘নতুন টেলিভিশন’ না ‘ভয়ঙ্কর নীরবতা’? ইউটিউব নিয়ে গবেষণায় অজানা তথ্য!

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৩ জুন ২০২৫

‘নতুন টেলিভিশন’ না ‘ভয়ঙ্কর নীরবতা’? ইউটিউব নিয়ে গবেষণায় অজানা তথ্য!

ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে ভিডিও নির্মাণ ও প্রকাশের ক্ষেত্র ইউটিউব দ্রুত প্রসার পেলেও, এই পুরো সমৃদ্ধির ভিত্তি যদি রাখা হয় এক এক্সক্লুসিভ, গোপনীয় অ্যালগরিদমের ওপর—তবে কি সেই ভরসা গোছানো? ইউটিউব প্রায় ২০ বছর পূর্ণ করেছে। ‘ব্রডকাস্ট ইউরসেলফ’-এর সাদাসিধে প্রতিপাদ্য থেকে উঠে এসে এখন এটি দাবি করে নিজের জায়গা নিয়েছে ‘নতুন টেলিভিশন’ হিসেবে, এমনকি ‘সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে’।

পুরনো মিডিয়া পতনের মুখে যেমন হারাচ্ছে দর্শক ও আয়, যেমন প্যানাভিশন হলিউডের অফিস বন্ধের পথে, তেমনি ভিএফএক্স ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ সংকুচিত; ঠিক তখন এই নতুন ক্রিয়েটর ইকোনমি শরিক হচ্ছ ধীরে ধীরে বড় হওয়া এই ‘স্বতন্ত্র ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনীতির’, যার মূলশ্রোত ইউটিউব।

বিশ্লেষক ইভ্যান শ্যাপিরো বলেন, পেছনের ৫ বছরে ইউটিউবভিত্তিক ইকোনমি বেড়েছে ২৫% (তুলনায় ৩% বৃদ্ধির ক্লাসিক মিডিয়ায়), ২০৩০ সালের মধ্যে এর বাজার হয়ে উঠবে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবার সম্ভাবনা। সবাই এটাই বিশ্বাসে নেয়।

ইউটিউবে প্রায় সব ভিডিও, প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘণ্টা কন্টেন্ট–তবে এর অধিকাংশই এক অদৃশ্য কর্তৃপক্ষিত ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর লাইনে কাজ করে। সাবস্ট্যাক, প্যাট্রিয়ন বা অন্যান্য ভিডিও প্ল্যাটফর্মও থাকলেও, ইউটিউবের পরিমণ্ডলের প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে একটি ভিডিও রিকমেন্ড তাঁয়ার মাধ্যমে স্বভাবেই পরিবর্তন করা হয়। ইউটিউবের ‘টিভি'-মতো ইন্টারফেস, 'সিজন' ফিচার–সবকিছু টিভির মত করে তুলেছে, এবং ফলস্বরূপ শব্দ–চিত্র দেখা হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন ঘন্টা!

ইউটিউবের অ্যালগরিদম গেমিং নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। রিকমেন্ডেশনের পথ অসংগঠিত এবং বিপজ্জনক পথ তৈরি করেছে–ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মানসিক স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক প্রভাব সবই প্রভাবিত করছে। অন্য সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে নির্দেশিত বিজ্ঞাপন দেখিয়ে হুবহু সমস্যা তৈরি হয়েছে—কিন্তু ইউটিউব যেন অল্প আলোচনায় থাকে। এবং ‘নিউ টিভি’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার ফলে এই বিষয়গুলো পড়ছে অনেকে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের ‘ইনিশিয়েটিভ ফর ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ দুই বছর ধরে গবেষণা চালায় ইউটিউব সার্ভারের প্রকৃত ভিডিও খোঁজার জন্য। তারা এমন অদ্ভুত প্রোগ্রাম বানায় যা এলোমেলো ১১ অক্ষরের স্ট্রিং করে ইউটিউব ভিডিও আইডি চেক করে। এর মাধ্যমে ১৮ ট্রিলিয়ন সম্ভাব্য ইউআরএল যাচাই করে তারা পায় মাত্র ১০,০১৬ ভিডিও—একটা সদর্থক ‘স্ট্যাটিসটিক্যাল স্যাম্পল সাইজ’।

পদ্ধতির সারাংশ

  • অধিকাংশ ভিডিও পায় ৫০০-এর কম ভিউ

  • গড় ভিউ সংখ্যা মাত্র ৪১

  • ভিডিওর গড় দৈর্ঘ্য ৬৪ সেকেন্ড

  • ইংরেজি কন্টেন্ট ২৮%, তার পর হিন্দি এবং স্প্যানিশ

  • ৪% ভিডিও একবারও দেখাও হয়নি

  • মাত্র ০.২১% ভিডিও মনিটাইজড

  • ৪% কল টু অ্যাকশন আছে

  • মাত্র ৩৮ শতাংশের উপর কোনো ধরনের সম্পাদনা করা হয়েছে

  • মাত্র ১৮% ভিডিওতে ভালো মানের অডিও

ইউটিউব জমা করে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের গোপন খুব বড় ডেটা—এলোমেলো অ্যালগরিদম চালায়, কিন্তু তা প্রকাশ করে না। এটিকে রাজনৈতিক বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণে দাহোপযোগী–যেমন রেডিক্যালাইজেশন, বা ছোট একাউন্টের আয় নিয়ন্ত্রণ করে।

ফেসবুক প্রকাশ্যে কনটেন্ট প্রকাশ করে নিয়মের সন্ধানে, তারপরে অ্যাডজাস্ট করে দমিয়ে দেয়–তারপর পেইড প্রোমোশন চালু করে, তারপর আর এগুলো দরকার নেই বলে চালু নতুন ফিচার নিয়ে আসে। আবার নতুন বন রয়েছে৷ এখন ইউটিউবের বিষয়।

হলিউড ও টিভি সংকুচিত হলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ‌ থাকবে ‘ক্রিয়েটর ইকোনমি’–তে, আর তার জন্য এই কাঠামো যদি এক অপারেটরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাক‌ে তাহলে সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, প্রসারিত ব্যবস্থার প্রয়োজন।

ইউটিউব আজকের ডিজিটাল অডিও–ভিজ্যুয়ালায়্ন ইকোনমির কেন্দ্রবিন্দু, এক ট্রিলিয়ন ঘন্টা ভিডিও দেখার প্ল্যাটফর্ম হলেও, তা কাজ করে গোপনীয় অ্যালগরিদম–এর ওপরে। তার অস্বচ্ছ দলিল, নজরদারি কনটেন্ট ও সামরিক-রূপান্তরিত ক্ষমতা ফলে ক্রিয়েটরদের জন্য ভবিষ্যত ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্থাগুলোর উচিত আরও স্বচ্ছতা ও কর্তৃত্ব–বিভাজন নিশ্চিত করা, যাতে ক্রিয়েটররা বিনা সীমায় সৃষ্টি করতে পারে।

আবির

×