
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুইদিনে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন একজন ব্যবসায়ী, একজন রোলার চালক, একটি ড্রাম ট্রাকের চালক ও সহকারী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটলেও কার্যকর কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সড়কে মৃত্যু যেন এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকালে মীরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় মারা যান স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার দে (৬৫)। তিনি বারইয়ারহাট পৌর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বারইয়ারহাটে একটি ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তা সবাই ব্যবহার করতে পারেন না। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে পড়েন।
এর আগে রোববার (২২ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টার সময় মীরসরাইয়ের জামালের দোকান এলাকায় ঢাকামুখী লাইনের সড়ক উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত থাকা রোলারের পেছনে ফার্নেস অয়েলবাহী একটি ট্যাঙ্কার ধাক্কা দেয়। এতে ট্যাঙ্কার এবং সড়ক সংস্কারের কাজে নিয়োজিত থাকা রোলার সড়কের পাশে থাকা ডোবায় পড়ে যায়।
এসময় তেলবাহী ট্যাঙ্কারে আগুন ধরে যায়। খাদে পড়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাঙ্কারের নিচে আটকে ছিলেন রোলার চালক হাবিব উল্লাহ (৬০)। দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। তিনি মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদিঘী বাজার এলাকায় কনটেইনারবাহী একটি লরির পেছনে একটি স্ক্র্যাপবাহী ড্রাম ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ড্রাম ট্রাকের চালক ফারুক হোসেন (৩৯) এবং তার সহকারী রবিউল ইসলাম (৩৫)। নিহত ফারুক হোসেন ঢাকার মিরপুর ও রবিউল গাজীপুর সদরের বাসিন্দা ছিলেন।
দুর্ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। সোমবার (২৩ জুন) সকালে বারইয়ারহাট বাজারে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা নিরাপদ পারাপারের দাবিতে ‘আন্ডারপাস চাই’ স্লোগান তোলেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম লিটন ও নাজমুল হক সোহাগ বলেন, ‘প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সড়ক পার হয়। বৃদ্ধ, শিশুরা ফুটওভার ব্রিজে উঠতে পারে না। তাই আমরা বারইয়ারহাটে আন্ডারপাস চাই।’
পথচারী রওশন আরা বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়ালেই গা শিউরে ওঠে। এত গতি! একটু ভুল করলেই লাশ। প্রশাসনের চোখ খুলবে কবে?’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি, স্পিড চেক করছি। তবে পথচারীদের সচেতন হতে হবে। বারইয়ারহাটে আন্ডারপাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ এবং পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এই মৃত্যুর মিছিল থামবে না।
রাজিব মজুমদার/রাকিব