ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

পাইকগাছায় আঁশফলের বাম্পার ফলন, বাজারে বেড়েছে চাহিদা

আশরাফুল ইসলাম সবুজ,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাইকগাছা, খুলনা

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২৩ জুন ২০২৫

পাইকগাছায় আঁশফলের বাম্পার ফলন, বাজারে বেড়েছে চাহিদা

ছবিঃ জনকণ্ঠ

লিচুর মৌসুম শেষ। তবে বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে লিচুর স্বাদ-ঘ্রাণের ঘরোয়া এক বিকল্প—আঁশফল। গ্রামবাংলার পরিচিত এই ফলটি অনেকের কাছে কাঠলিচু বা লংগান নামেও পরিচিত। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও আকারে কিছুটা ছোট এবং রসালো অংশ কম হলেও এর স্বাদ চমৎকার—মিষ্টি ও সুস্বাদু।

পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আঁশফলের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ১০০টি আঁশফল বিক্রি হচ্ছে, আর প্রতিটি গাছ ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে পাইকারি দরে।

চাষিদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন বাদুড়ের উপদ্রব। একবার বাদুড় দল বুঝে গেলে, এক রাতেই পুরো গাছের ফল খেয়ে ফেলে। তাই ব্যবসায়ীরা আঁশফল রক্ষায় গাছগুলোতে নেট দিয়ে ঢেকে রাখছেন।

আঁশফলকে বলা হয় “গরিবের লিচু”। গোলাকার এই ফলের শাঁস সাদা, চকচকে ও মিষ্টি। ফলের ভিতরের বীজ কালো ও চকচকে, যা সহজেই শাঁস থেকে আলাদা করা যায়। এটি দেখতে যেমন লিচুর মতো, খেতেও অনেকটা তেমনি।

এটি একটি চিরসবুজ বৃক্ষ, যা সাধারণত ৬ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বেলে দোআঁশ মাটিতে আঁশফল গাছ ভালো জন্মে। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এর উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশেও এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আঁশফলে রয়েছে শর্করা, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান। এর শুকনো শাঁস দিয়ে তৈরি হয় ভেষজ ওষুধ। এতে অবসাদ দূর করার গুণ রয়েছে। এছাড়াও হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে আঁশফলের উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

সোমবার(২৩জুন)সরেজমিনে উপজেলার গদাইপুর, রাড়ুলী, হরিঢালী ও কপিলমুনি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে এসব অঞ্চলে আঁশফলের গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত এই ফল বাজারে পাওয়া যায়।

একসময় আঁশফল খেয়ে আষাঢ় উদযাপন করতো বাঙালি। তবে কালের ব্যবধানে আপেল, কমলা, আঙুর, লিচু প্রভৃতি ফলের দাপটে আঁশফল তার কদর হারিয়েছিল। কিন্তু নতুন জাত ও পুনরায় চাষের বিস্তারে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই ফল আবারও ফিরে পাচ্ছে তার হারানো গৌরব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন জানান, দেশে আঁশফলের গুণগতমান এখনও খুব উন্নত না হলেও বারি আঁশফল-১ ও বারি আঁশফল-২ জাতের মাধ্যমে এর মান উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমিতে আঁশফলের চাষ কৃষকদের জন্য লাভজনক হতে পারে। এজন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের আঁশফলের চারা রোপণে উৎসাহ দিচ্ছে।

সর্বোপরি, আঁশফল শুধু একটি ফল নয়, এটি বাংলার মাটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ঐতিহ্য, এক সংস্কৃতি—যা এখন অর্থনীতির সম্ভাবনাও তৈরি করছে।

আলীম

×