
বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত
বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা’! তা মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে যেখানেই হোক! নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে আলোচনা না করে মেহেদি হাসান মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করার পর থেকেই আলোচনার শুরু। বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, বিষয়টা মোটেই ভালোভাবে নেননি শান্ত। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সহসা টেস্টের নেতৃত্ব ছাড়ছেন তিনি।
গলে ড্র টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে উজ্জীবিত দল নিয়ে কলম্বো টেস্ট সামনে রেখে সোমবার অধিনায়ক যখন ফুরফুরে মেজাজে অনুশীলনে তখনই বিশ্বস্তসূত্রের বরাত দিয়ে ক্রিকবাজ খবর প্রকাশ করে, আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টই হতে যাচ্ছে অধিনায়ক হিসেবে শান্তর শেষ টেস্ট ম্যাচ!
স্বভাবতই অনুশীলনের আর সব অনুষঙ্গ ছাপিয়ে বড় ইস্যু হয় এটি। যেখানে নেতৃত্ব ছাড়ার গুঞ্জনের বিষয়টি পরিষ্কার না করে বরং রহস্য বাড়িয়ে দিয়েছেন শান্ত। জানিয়েছেন সম্ভাব্য সব ইস্যুতেই বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে আলোচনা চলছে, যা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্তই নেবেন। আপাতত লক্ষ্য কলম্বোতে সিরিজ নির্ধারণী টেস্ট।
‘আলোচনা তো আগে থেকেই হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে হতে থাক। আমি এ বিষয়ে (অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া) এই মুহূর্তে কোনো কমেন্ট করতে চাই না। কারণ দুইদিন পরে টেস্ট ম্যাচ, টেস্ট ম্যাচটা ভালোভাবে খেলতে চাই। টেস্ট ম্যাচটাতে ভালোভাবে কন্ট্রিবিউট করতে চাই; একজন অধিনায়ক হিসেবে, একজন ব্যাটার হিসেবে। এই মুহূর্তে আলোচনাটা জায়গায় থাক।’ গলে ড্র টেস্টে খেলেছেন ১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস।
বাংলাদেশের প্রথম ও টেস্ট ইতিহাসের ১৬তম ক্রিকেটার হিসেবে দুইবার এ কীর্তি গড়েছেন শান্ত। ভালো পারফর্ম করেই অনেকেই অবসর নেন, কিংবা অধিনায়কত্ব থেকে সরে যান। শান্তর ক্ষেত্রেও কী এমন হবে জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘সব থেকে ভালো মুহূর্ত ছিল আগের টেস্টে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে তখনই বলে দিতে পারতাম। না এই মুহূর্তে এ রকম কোনো কিছুর প্লান নেই।
ভালো খেলতে ভালো খেলে ছেড়ে দিতে হবে, মানুষকে দেখাতে হবে এ রকমও না। আবার খারাপ খেললে করা যাবে না, এ রকমও না। জিনিসটা হয়েছে যেটা দলের জন্য ভালো হবে, দলের ভালো কিছু হবে ওটাই করা হবে। তো এই মুহূর্তে এটা নিয়ে খুব বেশি কথা না বলাটাই ভালো।’ এরপরেই শান্ত যোগ করেন, ‘সবার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে খুব বেশি আলোচনা- সমালোচনা মাতামাতির দরকার নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা টেস্ট ম্যাচ সামনে। আমি আশা করব এটা কিভাবে ভালো খেলা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে।’ সোমবার গলে অনুশীলন শুরুর আগে বলেন শান্ত।
এর আগে কলম্বো টেস্টের পর অধিনায়ক হিসেবে আর দায়িত্বে থাকছেন না শান্ত- এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমন খবর সামনে আনে ক্রিকবাজ। সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় টেস্ট শেষে জানানো হবে, নাকি পরে কার্যকর হবে, সেটা নির্ভর করছে বোর্ডের সঙ্গে তার আলোচনার ওপর। ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার পর শান্ত নিজের সিদ্ধান্তে বেশ দৃঢ়।
সূত্রের ভাষ্য, ‘আমার মনে হয় না শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর শান্ত অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন। আমি ওকে অনেকদিন ধরে চিনি। ওর সঙ্গে যা ঘটেছে, তাতে ও খুব একটা খুশি নয়Ñএটাই আমার ধারণা।’ জানা গেছে, এক বছরের জন্য শান্তকে টেস্ট দলের দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনি তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। মিরাজের কাছে ওয়ানডের নেতৃত্ব হারানোর আগে ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে নিজে থেকেই টি২০’র দায়িত্ব ছাড়েন শান্ত। সেই সময় বোর্ডকেও জানিয়েছিলেন, তিনি টেস্ট ও ওয়ানডে দল চালাতে চান।
শান্ত এক সময় সব ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু তৎকালীন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদই টেস্ট ও ওয়ানডে দলে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেন। তবে গত ১২ জুন শান্তকে না জানিয়েই ওয়ানডেতে নতুন অধিনায়ক করা হয় মিরাজকে।
এই সিদ্ধান্ত শান্তর জন্য ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কারণ তিনি আগামীতেও ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং শ্রীলঙ্কা সফর ঘিরে কয়েক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনায় নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ওয়ানডে দলের কাঠামোর প্রেক্ষাপটে খেলোয়াড়দের তাদের ভূমিকা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছিলেন। যদিও বর্তমান বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল পরবর্তীতে বলেছিলেন, শান্তর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি। বরং বোর্ডের সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।