
মৃত সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক সরকারের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার (ভারতে নিহত) সরকারি কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে জমি অধিগ্রহণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জমিটি অধিগ্রহণ সমীচীন নয় মর্মে একটি রিপোর্ট দেওয়ায় কালীগঞ্জে কর্মরত এক উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে বদলিও করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে জোরপূর্বক সরকারি অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কালীগঞ্জ উপজেলার ফরাশপুর গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম।
সেসময় উপস্থিত তার ভাই নজরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে আমাদের তিন ভাইয়ের ওয়ারিশ হিসেবে ১৭ জন মালিকের নামে এক দাগে ১২৪ শতক জমি রয়েছে। আমরা মালিকগণ পৃথকভাবে ভোগ দখল করে আসছি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণের জন্য এই জমির মধ্যে থেকে ২৪ শতক জমি গোপনে অধিগ্রহণ করা হয়। একপর্যায়ে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে চিঠি দিয়ে টাকা গ্রহণের জন্য বলা হয়। আমরা এর প্রতিবাদ করি এবং জেলা প্রশাসকের কাছে গোপনে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে বরং টাকা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। আমরা টাকা গ্রহণ না করে আদালতের আশ্রয় নিই। মামলাটি এখনও আদালতে চলমান রয়েছে।
এদিকে আদালতে মামলা চলমান থাকায় অধিগ্রহণ কর্মকর্তারা জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে ব্যর্থ হন। এখনও অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি, গেজেটও প্রকাশিত হয়নি। এরপরও আমাদের জমিতে জোর করে ঘর নির্মাণ করে বর্তমানে তা ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সেই সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জোর করে আমাদের জমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। জমিটি অধিগ্রহণ সমীচীন নয় মর্মে রিপোর্ট দেওয়ায় কালীগঞ্জে কর্মরত একজন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের এই জমির মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ শতক জমি সড়ক বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। সেই একই জমি থেকে পুনরায় আরেক দফা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, এক জমি দুই দফা বা দুই সংস্থা অধিগ্রহণ করতে পারে না। অন্যদিকে, রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য ২৪ শতক জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের প্রায় ৩৩ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে নেওয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ওই সময়ের সংসদ সদস্য আনার এবং রেজিস্ট্রি অফিসের কথিত দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন লোকজন দিয়ে রাতের আঁধারে আমার মার্কেট ভেঙে দিয়ে জায়গাটি ফাঁকা করে সেখানে ভবন নির্মাণে বাধ্য করেন। গত ৫ আগস্টের পর এই ভবনের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন আবার সেটি ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি গেজেট প্রকাশের পূর্বে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে নির্মিত পাকা ঘর ব্যবহার না করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজিম আনার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গত ১১ মে চিকিৎসার কথা বলে দর্শনা-গেদে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে যান। ওই দিনই তিনি কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন।
পরদিন ১৩ মে দুপুরে ‘বিশেষ প্রয়োজনের’ কথা বলে আনোয়ারুল আজিম আনার বেরিয়ে যান। সন্ধ্যায় ফিরে আসার কথা থাকলেও আর ফেরেননি। ১৪ মে থেকে তার পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সংক্রান্তে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
২২ মে গোপাল বিশ্বাস কলকাতার গণমাধ্যমকে জানান, এমপি আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ তাকে জানিয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘সঞ্জীবা গার্ডেনে’ এমপি আজিম হত্যার শিকার হন। সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকি থেকে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় আলোচিত চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে ভারত ও বাংলাদেশ— দুই দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
সানজানা