ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

আগামী দুই দশকে প্রায় অর্ধেক পেশা বিলুপ্ত করবে এআই, নতুন বাস্তবতায় কে কতটা প্রস্তুত?

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:১৪, ২৩ জুন ২০২৫

আগামী দুই দশকে প্রায় অর্ধেক পেশা বিলুপ্ত করবে এআই, নতুন বাস্তবতায় কে কতটা প্রস্তুত?

ছবি: সংগৃহীত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর কোনো কল্পনার বিষয় নয়। বরং, এটি বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রা, কর্মপদ্ধতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং যোগাযোগের পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, পরীক্ষা মূল্যায়ন, এমনকি রোগ নির্ণয় পর্যন্ত—প্রতিটি ক্ষেত্রে এআই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিটি অগ্রগতি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

যেসব কাজ একসময় শুধু মানুষের পক্ষে করা সম্ভব ছিল, এখন তার অনেকটাই প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এর ফলে অনেক চাকরি বিলুপ্তির আশঙ্কা যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি নতুন ধরণের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (UGA) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, আগামী দুই দশকের মধ্যে বর্তমানের প্রায় অর্ধেক পেশা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তবে আশার কথা হলো—বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এমন পেশায় যুক্ত হবে, যা এখনও সৃষ্টি হয়নি।

এই পরিবর্তনমুখী পেশাগুলোর জন্য দরকার হবে এআই প্রযুক্তি, সিস্টেম এবং লজিক সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। ফলে বাস্তব চ্যালেঞ্জ এখন আর শুধুমাত্র চাকরি হারানো নয়, বরং ভবিষ্যতের পেশার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে না পারা।

যন্ত্র দক্ষ হলেও আবেগ, সহানুভূতি ও অন্তর্জ্ঞান তাদের নেই। এই দুর্বলতা যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা হলেও, মানুষের শক্তি। সৃজনশীলতা, সহযোগিতা ও যোগাযোগের মতো ‘সফট স্কিল’গুলোই ভবিষ্যতের কর্মজীবনে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখবে।

UGA-র গবেষণায় অধ্যাপক লেহোং শি জানান, “সফট স্কিল যেমন—সৃজনশীলতা, দলগত কাজের দক্ষতা ও যোগাযোগের সক্ষমতা—এসব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।”

৫০টি দেশের জাতীয় এআই কৌশল পর্যালোচনা করে গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৩টি দেশ এই খাতে ‘উচ্চ অগ্রাধিকার’ দিয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ইউরোপীয় দেশ এবং বাকি দুটি মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়া।

মূলত ছয়টি সূচকের ভিত্তিতে এসব কৌশল বিশ্লেষণ করা হয়—লক্ষ্য নির্ধারণ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি, প্রকল্পের উদাহরণ, সাফল্যের মাপকাঠি, সহায়ক কাঠামো এবং সময়সীমা।

প্রায় সব দেশই বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই ভিত্তিক প্রোগ্রাম সম্প্রসারণে মনোযোগ দিচ্ছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে এই প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও নিচ্ছে।

অর্ধেকের বেশি দেশ পেশাগত প্রশিক্ষণে এআই সংযুক্ত করছে। তবে, গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রবীণ, বেকার ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জাতীয় কৌশল থেকে অনেকটাই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

জার্মানির মতো দেশগুলো সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ নয়, বরং জনগণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে এআই সচেতনতা গড়ে তোলা। স্পেন আবার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের এআই শিক্ষায় সম্পৃক্ত করছে।

অন্যদিকে, কিছু এশীয় দেশ প্রতিরক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এআই প্রয়োগে বেশি মনোযোগী, যা সংশ্লিষ্ট দেশের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন।

গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ দেশ সফট স্কিল উন্নয়নের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ, সমস্যা সমাধান, নেতৃত্বদান, দলগত কাজ কিংবা গ্রাহক সেবায় এই দক্ষতাগুলোর বিকল্প নেই।

গবেষণাগুলোর মূল বার্তা—সব দেশ একই পথে হাঁটছে না, কিন্তু লক্ষ্য একটাই: একটি প্রস্তুত, অভিযোজিত ও টেকসই কর্মশক্তি গড়ে তোলা।

যে দেশগুলো আগেভাগেই পদক্ষেপ নিচ্ছে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করছে এবং সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করছে—তারা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মবিশ্বে এগিয়ে থাকবে।

এটা আর শুধুমাত্র প্রযুক্তির গল্প নয়, বরং আমাদের আজকের সিদ্ধান্ত আগামী দিনের নিয়তি নির্ধারণ করবে।

সূত্র: earth.com

সায়মা ইসলাম

×