গর্ভধারণের আগেই হৃদরোগ শনাক্তে এআই প্রযুক্তি, মায়েদের মৃত্যুহার কমাতে নতুন সম্ভাবনা

প্রতিবছর গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের পর অনেক নারী হৃদরোগজনিত জটিলতায় মারা যান, অথচ এই মৃত্যুর অনেকগুলোই প্রতিরোধযোগ্য। গর্ভধারণের আগেই হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পারলে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সম্ভব—এমন ভাবনা থেকেই হৃদরোগ শনাক্তে নতুন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর প্রযুক্তি পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত Mayo Clinic-এর গবেষকরা।

এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন ডা. আনজা কিনাসজুক এবং ডা. ডেমিলাডে অ্যাডেডিনসেও। তারা দুই ধরনের এআই টুল ব্যবহার করেন—একটি ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং অন্যটি ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ (Eko DUO) দিয়ে হৃদস্পন্দনের শব্দ বিশ্লেষণ করে।

গবেষণার ধরন ও ফলাফল

গবেষণায় ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ২০০ নারীকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়।

গ্রুপ ১: যেসব নারীর পূর্ব থেকেই ইকোকার্ডিওগ্রাম করানোর সময় নির্ধারিত ছিল, তাদের ECG ও ডিজিটাল স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে এআই বিশ্লেষণ করা হয়।

গ্রুপ ২: সাধারণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আসা নারীদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়, যাতে জানা যায়, এআই প্রযুক্তি দিয়ে আগেই হৃদরোগ শনাক্ত করা কতটা সম্ভব।

ফলাফল বলছে, AI-ECG পদ্ধতিটি ০.৯৪ এবং AI স্টেথোস্কোপ Eko DUO ০.৯৮ স্কোর পায় ‘এয়ারিয়া আন্ডার দ্য কার্ভ’ (AUC) স্কেলে, যা শক্তিশালী নির্ভুলতা নির্দেশ করে। দ্বিতীয় গ্রুপে ১% ক্ষেত্রে AI-ECG এবং ৩.২% ক্ষেত্রে AI স্টেথোস্কোপ হৃদরোগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

গর্ভধারণ পরিকল্পনার আগে স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব

ডা. অ্যাডেডিনসেও বলেন, “আমেরিকায় প্রায় অর্ধেক গর্ভধারণই অনাকাঙ্ক্ষিত, এবং ১-২% নারী হৃদরোগে আক্রান্ত থাকলেও তারা তা জানেন না। এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গর্ভধারণের আগেই ঝুঁকি শনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া গেলে মাতৃমৃত্যুর হার কমবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে।”

অতীত গবেষণার ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই গবেষণা Mayo Clinic-এর পূর্বের আরও কিছু গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে গর্ভকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথি শনাক্তে এআই টুল ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রসূতি রোগী ও নাইজেরিয়ার নারীদের ওপর চালানো ট্রায়ালেও সফলতা পাওয়া গেছে। আগামীতেও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষণা চলবে বলে জানানো হয়েছে।

Mayo Clinic তাদের এই প্রযুক্তি EKO Health ও Anumana নামের প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। গবেষণায় সংশ্লিষ্ট কিছু চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তি থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন, তবে Mayo Clinic সেই অর্থ ব্যয় করবে তাদের অলাভজনক রোগীসেবা, শিক্ষা ও গবেষণার কাজে।

সূত্র: Mayo Clinic News Network