ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

২ লাখ ১৭ হাজার বছর আগের রহস্যময় খুলি যা বিজ্ঞানীদের হতবাক করল

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ২৩ জুন ২০২৫

২ লাখ ১৭ হাজার বছর আগের রহস্যময় খুলি যা বিজ্ঞানীদের হতবাক করল

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালে প্রথম আবিষ্কৃত ‘ড্রাগন ম্যান’ খুলির সত্য পরিচয় দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের জন্য ধাঁধাঁ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি করা এক নতুন গবেষণায় জানা গেছে, ড্রাগন ম্যান আসলে ডেনিসোভান নামে পরিচিত এক প্রাচীন মানব জাতির সদস্য ছিলেন।

ডেনিসোভানরা প্রায় ২১৭,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে বসবাস করত এবং তারা আধুনিক মানুষের জিনে কিছু অংশ স্থানান্তরিত করেছিল। প্রথম ডেনিসোভানের সন্ধান মেলা ২০১০ সালে, সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহা থেকে পাওয়া একটি মেয়ের আঙুলের হাড়ের মাধ্যমে।

তবে তখন থেকে তাদের সম্পর্কে খুবই কম তথ্য মিলেছিল। ড্রাগন ম্যানের খুলি এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রথম নিশ্চিত ডেনিসোভান খুলি হিসেবে বিজ্ঞানীদের জন্য অনেক তথ্যের গোপন দরজা খুলে দিয়েছে।

এই খুলি ১৯৩৩ সালে চীনের হারবিন শহরের কাছে এক রেলকর্মী আবিষ্কার করেন এবং তা গোপনে একটি কূপে লুকিয়ে রাখেন। ২০১৮ সালে তার পরিবার এটি উদ্ধার করে হেবেই জিও ইউনিভার্সিটিতে দান করেন।

বিজ্ঞানীরা এই খুলিকে ‘হোমো লংগি’ বা ‘ড্রাগন ম্যান’ নামে অভিহিত করেছেন, যেখানে ‘লংগি’ মানে কালো ড্রাগন, যা খুঁজে পাওয়া স্থানের নাম।

গবেষকরা ড্রাগন ম্যানের দাঁতের প্লাক থেকে জিনোম সংগ্রহ করে নিশ্চিত করেছেন যে এটি ডেনিসোভানের। খুলির গঠন থেকে বোঝা যায় ড্রাগন ম্যানের বড় বড় চোখের গর্ত, মোটা ভ্রু, এবং প্রচন্ড মোটা খুলি ছিল। তাদের মস্তিষ্কের আকার আধুনিক মানুষের থেকে প্রায় ৭% বড় হতে পারত।

খুলির ভিত্তিতে পুনর্গঠিত মুখে মোটা চোয়াল, চওড়া মুখমণ্ডল ও বড় নাক দেখা যায়। বিশেষ করে ড্রাগন ম্যান ও ডেনিসোভানরা শারীরিক দিক থেকে আধুনিক মানুষের থেকে অনেক বড় ও শক্তিশালী ছিল বলে মনে করা হয়।

বিশ্বের বড়ো খুলির মধ্যে হারবিনের ড্রাগন ম্যান খুলি অন্যতম বৃহত্তম, বলে জানান গবেষকরা।

তবে ডেনিসোভানদের সম্পর্কে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। তারা কি শুধুমাত্র এমন বড়গড় হওয়ার মানুষ ছিল, নাকি এই জাতির ভেতর অনেক বৈচিত্র্য ছিল, সেটি এখনো অজানা।

বৈজ্ঞানিকরা ধারণা করছেন, ড্রাগন ম্যান ঠান্ডা জলবায়ুর প্রতি খাপ খাইয়ে উত্তর চীনে শিকারি-সংগ্রাহক হিসেবে জীবনযাপন করত। তবে ডেনিসোভানের হাড় বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলেও পাওয়া গেছে, যা তাদের বৈচিত্র্যের ইঙ্গিত দেয়।

এই আবিষ্কার আমাদের প্রাচীন মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মানব বিবর্তনের ধারা বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে।

 

সূত্র: ডেইলিমেইল

আবির

×