ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে ৪১টি প্রস্তাব গৃহীত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:০২, ২৩ জুন ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে ৪১টি প্রস্তাব গৃহীত

এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ১ হাজার কোটি টাকা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে দেওয়ার তাগিদ প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাছে এসএমই ফাউন্ডেশনের দেওয়া ১৪০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪১টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় ফাউন্ডেশনটি।

সোমবার এসএমই ফাউন্ডেশনের উপ মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানান।

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, এর ফলে দেশে এসএমই খাতের প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে। অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতার ৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন’ অংশে নারী উদ্যোক্তাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এছাড়া আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতামূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভাগীয় শহরে এসএমই ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেস প্রতিষ্ঠাসহ উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে, যা ইতোমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সুতরাং এসএমই ফাউন্ডেশন আশা করে, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। পাশাপাশি বাজেটে এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ এবং সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তার জন্য ঘোষিত ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার প্রদত্ত তিনশ কোটি টাকার তহবিল নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে সফলভাবে বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। বর্তমানে সেই অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’ থেকে তৃতীয় দফার ঋণ বিতরণ চলমান রয়েছে। এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের চলমান ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, দেশব্যাপী এসএমই ক্লাস্টার ম্যাপিং হালনাগাদকরণ ও চাহিদা নিরূপণ, ইনকিউবেশন সেন্টারে সেবা প্রদান, এসএমই পণ্য মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

এসএমই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আগে এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি এবং আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বরাবর উপস্থাপন করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর পর্যন্ত এসএমই ফাউন্ডেশনের ৫৫৭টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাবনা সরকার/এনবিআর কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এবং বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।

২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন হতে সামগ্রিক এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ১৪০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্য থেকে প্রায় ৪১টি প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ বা আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছে যা 'অর্থ অধ্যাদেশ ২০২৫' এবং বিভিন্ন এসআরও বা আদেশের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।

গৃহীত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
১. বর্তমানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া আছে, এই সীমা বাড়িয়ে এসএমইদের জন্য ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা বাড়িয়ে এসএমইদের জন্য ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।
২. প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান, ডাল, বাদাম, আলু, টমেটো, তরল দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, হলুদ, মরিচ, সরিষা, পাট ইত্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বার্ষিক সরবরাহ মূল্য ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১% উৎসে কর কর্তনের আওতার বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে এই হার ১% থেকে কমিয়ে ০.৫% করা হয়েছে।
৩. রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিতে ভাঙারি সরবরাহের ক্ষেত্রে বার্ষিক সরবরাহ মূল্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩% উৎসে কর কর্তনের আওতার বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে এই হার ৩% থেকে কমিয়ে ১% করা হয়েছে।
৪. উৎসে কর কর্তন সংক্রান্ত একটি কম্প্রিহেনসিভ রিটার্ন প্রতি মাসের পরিবর্তে ষান্মাসিক জমা দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, উৎসে কর্তিত কর জমার সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি চালানের সার-সংক্ষেপ প্রতি মাসেই জমা দেওয়ার বিধানের বিপরীতে ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবে এটি এখন কোয়ার্টারলি করা হয়েছে।
৫. প্লাস্টিক পণ্য বা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কর/ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে প্লাস্টিক টয়ের ন্যূনতম মূল্য ৩.৫ থেকে ৪.০ করা হয়েছে।
৬. দেশেই উৎপাদিত/তৈরি হয় এ ধরনের পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস, লোশন, লিপস্টিক, বিভিন্ন ধরনের চকলেট ও লকের ইত্যাদির ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সানজানা

×