ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও জীবননাশের হুমকি সম্বলিত চিরকুট

গাংনীতে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা

জাহিদুর রহমান, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২৩ জুন ২০২৫

গাংনীতে আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা

এক সময়কার চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা। তখন এখানকার মানুষের ঘুম ভাঙত বোমার শব্দে। চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দীর্ঘদিন পর গাংনীতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। তারা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও জীবননাশের হুমকি সংবলিত চিরকুট রেখে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। চিরকুটে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও গোপনে ও প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এখনও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত বা আটক করতে পারেনি।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সময় গাংনী চরমপন্থীদের ঘাঁটি ছিল। শ্রেণিশত্রু খতম, চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের জন্য একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটত। পরে পুলিশি তৎপরতায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়। অনেকেই আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। জনজীবনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি আবারও পুরনো সেই ভয়াবহ চিত্র ফিরে এসেছে। একের পর এক বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও হুমকি সম্বলিত চিরকুট রেখে যাচ্ছে ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে। চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। অনেকেই গোপনে তা পরিশোধ করছেন। সন্ধ্যার পরপরই বিভিন্ন স্থানে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে ১৪টি বোমা উদ্ধার এবং দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি স্থানে বোমা রেখে চাঁদা দাবি ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও এখনও কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি, এলাকায় নিয়মিত টহল না থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত ১ মার্চ গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের কাছে একটি ব্রিজের ওপর তিনটি বোমা সদৃশ বস্তু পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা ওই স্থানে অবস্থান নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বোমা রেখেছিল বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

২৭ এপ্রিল রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের ছাদ থেকে তিনটি বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলো লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া খাতুন ও শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

৩ মে রাতে পাকুড়িয়া-খড়মপুর সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের বাধার মুখে ডাকাতরা বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।

১২ মে চোখতোলা মাঠ এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল, পাঁচটি ককটেল বোমা ও ৪০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। তারা জানায়, ডাকাতির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতিকারীরা বোমা তৈরি করছিল।

২ জুন রাতে বামুন্দী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের বাড়ির গেটে একটি বোমা ও একটি চিরকুট রেখে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

১৭ জুন গাংনীর চরগোয়াল গ্রাম ঘাটপাড়ার আলতাব হোসেনের দোকানের সামনে রাস্তা থেকে একটি বোমা সদৃশ বস্তু ও একটি হাতে লেখা চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ, যাতে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল বলেন, বোমা রেখে হুমকির ঘটনা এবং বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার সত্য। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। টহলও বাড়ানো হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

সজিব

×