
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্তকে আংশিক স্বাগত জানালেও, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’। সোমবার (২০ মে) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি সরকারের প্রতি ৮ দফা দাবি পেশ করে ৩১ মে’র মধ্যে তা বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দিয়েছে।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, “গত ১০ মে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।”
তাদের ভাষ্যে, “যেভাবে সরকার গেজেট প্রকাশ করেছে, তাতে ১৪ দলের শরিক এবং প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘জুলাই ঐক্য’। বর্তমানে ৮০টিরও বেশি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই প্ল্যাটফর্মের দাবি, তারা প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণআন্দোলন চালিয়ে আসছে।
তাদের ভাষায়, “আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি গ্রহণ না করলেও, কিছুটা ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালে যেসব আমলা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাকে টিকিয়ে রেখেছে, তারা এখনও সচিবালয়সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ন্ত্রণ করছে।”
সংগঠনটি অভিযোগ করে, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনও প্রকাশ্যে মিছিল করছে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকত, তাহলে তারা এই সাহস পেত না। বহু এমপি-মন্ত্রী এখনও দেশে রয়েছে এবং কিছু আমলা তাদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করছে।”
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কথাও তুলে ধরেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে জানানো হয়, শিগগিরই শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যমসহ সকল সেক্টরে থাকা ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ জন্য জুলাই ঐক্যের ওয়েবসাইটে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
জুলাই ঐক্যের ৮ দফা দাবি
১. আগামী ৩১ মে’র মধ্যে তালিকাভুক্ত আওয়ামী দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হবে।
২. তিন সরকারি কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান অগ্রগতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
৩. ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো এবং তাদের নির্দেশদাতাদের পরিবারের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করতে হবে।
৪. দোষী আমলা-কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. ৫ আগস্টের (৩৬শে জুলাই) মধ্যে সকল চিহ্নিত দোসরের নাম শতপত্রে প্রকাশ করতে হবে সরকারি ওয়েবসাইটে।
৬. দণ্ডবিধির ১৩২ ধারা বাতিল বা সংশোধন করে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ ও কারা সহায়তা করেছে সে তথ্য জানাতে হবে।
৮. প্রশাসন ও সচিবালয় থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে।
সংগঠনটি জানায়, উপরোক্ত দাবি মানা না হলে, ৩১ মে’র পর থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’সহ আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই আন্দোলনে ‘জুলাইয়ের স্প্রিট’ ধারণকারী ছাত্র-জনতা এবং সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
আফরোজা