ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোপালগঞ্জ-১

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতেও ছাড় দেবে না বিএনপি

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতেও ছাড় দেবে না বিএনপি

শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত গোপালগঞ্জ

শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত গোপালগঞ্জ। 
এই জেলায় সংসদীয় আসন তিনটি। এই তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি ও দুর্গ হিসেবে বরাবর পরিচিত। এমনই শক্ত ঘাঁটি যে, নৌকার বিরুদ্ধে যে দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সে দলের প্রার্থীকেই জামানত হারাতে হয়। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে যিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, প্রায় সবারই শেষ পর্যন্ত জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। 
গোপালগঞ্জের মানুষ বরাবরই নির্বাচনের সেটাই প্রমাণ করেছে যে, তাদের একটাই মার্কা আর সেটি হচ্ছে স্বাধীনতা, ও উন্নয়নের প্রতীক ‘নৌকা’। তারা মনেপ্রাণে লালন করেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভালো অবস্থানে আছে দলটি। কারণ দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অবহেলিত গোপালগঞ্জ উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে। 
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং মুকসুদপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-১ আসন। এ আসনে রয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক হেভিওয়েট নেতা লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান। 
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রথম তিনি এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শতকরা প্রায় ৮৭ ভাগ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সেই থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই মুহাম্মদ ফারুক খান এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ভোট-ব্যবধানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রেখে জয়ের ধারা বজায় রেখেছেন। 
টানা পাঁচবার নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান তার এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক ও আর্থ-সামাজিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এলাকায় শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। এছাড়াও শিক্ষা চিকিৎসা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এলাকার সকল ধরনের উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এলাকার সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টেছে। জীবনযাত্রা ক্রমেই আধুনিক হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এ আসনের সার্বিক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি আবারও ৬ষ্ঠবারের মতো নিশ্চিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন- এমন আশা তার সমর্থকদের। 
তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের আশায় আরও একজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মঞ্জুরুল হক লাভলু। তিনি এক সময় গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ভিপি ছিলেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেছেন, নৌকা যার, তিনি তার। দীর্ঘদিন তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ আসনে যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন, তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। 
এদিকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দলের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও এসব দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দল যদি অংশ নেয় তাহলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি আসনেই এসব দলের প্রার্থী থাকবে এবং সে লক্ষ্যে অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। 
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিএনপি যদি আগামী সংসদ নির্বাচনে যায় সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী থাকবে। গোপালগঞ্জ-১ আসনে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম। ২০০৮ এর নির্বাচনে এ আসনে কয়েক বাঘা নেতাকে টপকে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান। বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে গেলে এ আসনে তিনিই বিএনপির প্রার্থী হবেন। 
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাহাজ পাশা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির বর্তমান রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য দলের কর্মকা- সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহীন জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির কাশিয়ানী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ মান্নান মুন্নু দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। দলের মনোনয়ন পেলে তিনিই প্রার্থী হবেন।
এছাড়াও গোপালগঞ্জ-১ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন দলের এমন দুজন কাজ করছেন। একজন হলেন জেলা ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এবং অপরজন হলেন জেলা ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম লেলিন।

আরো পড়ুন  

×