
জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। চলছে একনায়কতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রকে বৈধভাবে বহাল রাখতে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা উন্নয়নের কথা বলে তা স্থায়ী করতে চাইছে।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর এসএস খালেদ সড়কে একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি আয়োজিত দলের সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু’র স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। তিন জোটের একটা রূপরেখা ছিল। তাতে আওয়ামী লীগ ছিল, তাদের সঙ্গে জামায়াতও ছিল। তারা সবাই মিলে আমাদের নেতা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। উনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন। তখন দাবি ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। আজকে ৩২ বছর পরে বলতে বাধ্য হচ্ছি বাংলাদেশে আজকে যে শাসন ব্যবস্থা চলছে এটাতে উল্টোটাই সফলতা লাভ করেছে। সেটা হল- ‘স্বৈরতন্ত্র মুক্তি পাক, গণতন্ত্র নিপাত যাক’। এখন দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।
সংবিধান অনুযায়ী এদেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে দেশের মানুষ এর ফল ভোগ করছে। তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগজনক ঘটনা, এই স্বৈরতন্ত্রকে বৈধ এবং ভালো হিসেবে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে এখন আলাপ করছেন। যে কিনা, দেশের জন্য স্বৈরতন্ত্র দরকার। এতে দেশের উন্নয়ন হয়, স্বৈরতন্ত্র হলে দেশের মানুষ ভালো থাকে। এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। গণতন্ত্রের জন্য এদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বলছে, গণতন্ত্র দরকার নেই, স্বৈরতন্ত্র অনেক ভালো।
সরকারের বিরোধীতা করা প্রত্যেকটি নাগরিকের ‘অধিকার ও দায়িত্ব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কেউ সমালোচনা করতে চাইলে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। মানুষকে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।
জি এম কাদের বলেন, মিয়ানমার বার বার রোহিঙ্গাদের আমাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্নভাবে যখন তখন তারা গোলাগুলি, বোমা ফেলছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। দেখে মনে হয় আমাদের দেশে কোনো শক্তিও নাই। কোনো নীতি নেই। আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধান করতে। রোহিঙ্গারা আমাদের বিরাট বোঝা হয়ে গেছে। দিনকে দিন মায়ানমারের উস্কানিমূলক কাজ বাড়ছে। আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে কোনোরকমভাবে তাদের সঙ্গে বাক্যবিনিময় করে শেষ করে দিচ্ছি। কোনো কাজ করে দেখাতে পারছি না। তাদেরকে কোনোরকম বিশেষ কোনো অবস্থায়ও ফেলতে পারছি না যে, তারা বাধ্য হবে।
দেশ দোজখের সমতুল্য হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ যারা পরপারে চলে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে নিকটাত্মীয়রা হয়ত শোকাহত হই। কিন্তু আমার বিশ্বাস, যারা ওপরে চলে যান, তারা মোটামুটি এদেশে থাকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এটি আমরা ধারণা করতে পারি। কারণ, এ দেশ এখন কিছুটা হলেও দোজখের সমতুল্য। মানুষ খেতে পারে না, চলতে পারে না, আয় নেই। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। দেশের প্রায় সবগুলো প্রকল্প জবাবদিহিহীনভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এগুলোতে বিপুল দুর্নীতি হচ্ছে। যখন দেশে মেগা প্রজেক্ট হয় তখন আমরা দেখি সুইস ব্যাংকে এক বছরে চার লাখ কোটি টাকা জমা হয়। এ টাকা কোথা থেকে আসে। সাধারণ ব্যবসা থেকে তো আসে না। এই দেনার ভার বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে বইতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত হয়ত বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। মেগা প্রজেক্টগুলোর ফিজিবিলিটি নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। এসব শুরু হলেও শেষ হয় নির্দিষ্ট মেয়াদের অনেক পরে। এগুলোতে যত আয় হবে তার চেয়ে দেনার দায় হবে বেশি। বাংলাদেশের জনগণ এই দেনার ভার সহ্য করতে পারবে না।
স্মরণসভার আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, উত্তর জেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব সফিক-উল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
এমএইচ