
রওশন ও জিএম কাদের
এবার জাতীয় পার্টিতে খেলা শুরু হয়েছে। পার্টি থেকে সরানো-অব্যাহতির প্রথা আবার চালু হয়েছে। জাপার এই সঙ্কট কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। জন্মলগ্ন থেকেই একের পর এক সঙ্কট লেগেই আছে। জন্মের পর এ পর্যন্ত পাঁচবার ভেঙ্গেছে। এবার জাপার কাউন্সিল, নেতৃত্ব এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এক বিবৃতিতে আগামী ২৬ নবেম্বর কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বেগম রওশন এরশাদের কাউন্সিল করার কোন এখতিয়ার নেই। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা জিএম কাদেরকে বিরোধদলীয় নেতা করার জন্য স্পীকারের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রেসিডিয়ামের সভায়ও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে কে হবেন জাপার কান্ডারি- রওশন এরশাদ, না জিএম কাদের, তা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এবার রওশনপন্থী হিসেবে বিবেচিত মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপিকে জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়ায় জাপায় নতুন সঙ্কট যোগ হয়েছে।
জাতীয় পার্টি থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতির পর বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই। তবে, আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।
গত বুধবার অব্যাহতির আদেশ পাওয়ার পর আমি একটু রাগান্বিত ছিলাম। এটা অস্বীকার করব না। আমি চেয়ারম্যানকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেটা তুলে নিয়েছি। সেটা গত বুধবার রাতেই বলে দিয়েছি। রংপুরেও আর কোন ঝামেলা হবে না। আমি আমার বহিষ্কার আদেশে অখুশি নই। আমি চাই, দলটা যেন সুন্দরভাবে চলে, না ভেঙ্গে যায়। দলটাকে ছোট করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে আমি নিজেই দলে থাকব না। যে কোন সময় দল থেকে পদত্যাগ করব। দলের ভাঙ্গাচোরা ভাল লাগে না। যে কোন সময় পদত্যাগ করতে পারি।
দলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হোক- সেটা চাই না, যেটা রংপুরে হয়েছে। এদিকে, রাঙ্গার অব্যাহতির খবরে ফুঁসে উঠেছে রংপুর। জিএম কাদেরের সমর্থকদের সঙ্গে রাঙ্গাপন্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। রাঙ্গাপন্থী মোটর মালিক ও শ্রমিকরা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলে পুনর্বহাল করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে, জাপায় যখন যোগ-বিয়োগের ফর্মূলা চলছে, ঠিক সেই সময়ই জাপা অনেকটা বিএনপিঘেঁষা দেখা যাচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ জন্য বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। গত ১৯ আগস্ট নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াসের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের একই টেবিলে বসার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই দলের সম্পর্ক বেড়েছে।
অনেকে কানাঘুঁষা শুরু করেছেন। যখন পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস চলছে, ঠিক সেই সময় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বুধবার জাপার যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বর্তমানে রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ জীবিত থাকাকালে ২০১৮ সালে রাঙ্গাকে দলের মহাসচিব করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। অব্যাহতি প্রসঙ্গে মশিউর রহমান রাঙ্গা এর আগে বলেন, ‘আমাকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত জিএম কাদেরের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী।’ আমি সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ। আমাকে রওশন এরশাদ হুইপ বানিয়েছেন, তিনি (জিএম কাদের) চাইলেও আমার এই পদ খাইতে পারবেন না। আমি দেখে নেব, উনি কিভাবে রাজনীতি করেন।
জাতীয় পার্টি গঠন হওয়ার পর এ পর্যন্ত পাঁচ দফা ভেঙ্গেছে। নেতাকর্মীদের সংশয় জাপা কি আবার ভাঙ্গবে? এদিকে, জাপার মধ্যে একটি গুঞ্জন উঠেছে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদকে নতুন উপনেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। চিঠিটি স্বাক্ষরের জন্য এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে থাইল্যান্ডের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম রওশন এরশাদের কাছে।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, এ বিষয়টি আমি জানি না। রওশন এরশাদ চলতি মাসেই দেশে ফিরছেন। আমরা কাউন্সিলের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও দলটির দশম জাতীয় সম্মেলনের আহ্বায়ক রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি পুরোপুরি সুস্থ; আমার ওপর কোন ধরনের চাপ নেই।
যারা আমাকে বারবার অসুস্থ বলে প্রচার করছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’ গত কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যমে নিজের অসুস্থতার খবর দেখার পর শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন রওশন এরশাদ। আল্লাহর রহমতে শীঘ্রই দেশে এসে সময়ের সাথী হব, বিপদে-আপদে থাকব তোমাদেরই পাশে, ইনশাল্লাহ।
জাতীয় পার্টির স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পীকারকে জানিয়েছে। এখন বিধি অনুযায়ী স্পীকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
যত দিন যাচ্ছে ততই রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুঁষা বাড়ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিমত, তারা আশা করেছিল দলটি চাটুকারমুক্ত হবে, তা হয়নি। জিএম কাদের দলটির দায়িত্ব নেয়ার পর চাটুকারদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। এলাকায় কোন অবস্থান নেই, সংগঠন নেই, শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চেহারা দেখিয়ে বড় বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন অনেকেই।
নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির এ অবস্থা দেখে পার্টির সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ। দল কি করবে এখন, ঠিক করে উঠতে পারছে না। জাপার ডিগবাজি অনেকের জানা। প্রতিষ্ঠাতা চেযারম্যান জোট গঠনের সময় নানা নাটক করেছেন। অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এসেছিলেন। এবার তার ভাই জিএম কাদেরের অবস্থাও অনুরূপ। তিনি একদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার সায় দিচ্ছেন, অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ফলে জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
বড় দুই দলের কেউ জাপাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এদিকে, জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাকর্মী জানান, বর্তমানে দলে তিনটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। অন্য গ্রুপে বেগম রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। অপর গ্রুপে এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের।
পার্টির মধ্যে এত গ্রুপ থাকার ফলে এককভাবে নির্বাচনও করতে পারছে না জাপা। যদিও জিএম কাদের বলেন, তারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। কোন জোটে যাবে- তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় পার্টিতে কোন সঙ্কট নেই। কোন ভাঙ্গনের মুখে পড়বে না জাতীয় পার্টি।
অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়তো বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যারা জাতীয় পার্টির কেউ না, কেউ হয়তো ছিল অনেক আগে জাতীয় পার্টিতে, আবার সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে কাউকে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা বেগম রওশন এরশাদকে অপব্যবহার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আবার অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি অবদান রাখতে পারছেন না। তাই পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা ও পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত এক বছরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকা- নিয়ে ভাবেনি।
এখন জাতীয় পার্টির স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পীকারকে জানিয়েছে। এখন বিধি অনুযায়ী স্পীকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে আর কেউ খেলতে পারবে না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এখন যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। যারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চায়, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কেউ সফল হবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে পার্টির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে।
১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। নবগঠিত পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব নিযুক্ত হন অধ্যাপক এম এ মতিন। পার্টির কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার জাহিদ।
ফ্রন্টের শরিক দল- জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ) মুসলিম লীগ (সা) নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টিতে একীভূত হয়। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি পাঁচটি অংশে ভাগ হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে মূল দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। অন্য চারটি অংশের একটির নেতৃত্বে আছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আরেক অংশের নেতৃত্বে আন্দালিব রহমান পার্থ এবং অপর একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (এমএ মতিন) নামে একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডাঃ এমএ মুকিত। বর্তমানে জাপার মূল অংশ নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার চান রাঙ্গা ॥ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে নিজের অব্যাহতির আদেশে অখুশি নন বলে জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই। তবে, আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। গত বুধবার মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে কিভাবে রাজনীতি করেন তা দেখে নেয়ার হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, গত বুধবার অব্যাহতির আদেশ পাওয়ার পর আমি একটু রাগান্বিত ছিলাম। এটা অস্বীকার করব না। আমি চেয়ারম্যানকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেটা তুলে নিয়েছি। রংপুরেও আর কোন ঝামেলা হবে না। সেটা গত রাতেই (বুধবার) বলে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি কোন অন্যায় করিনি। এটা বলার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি। আমি আমার বহিষ্কার আদেশে অখুশি নই। আমি চাই, দলটা যেন সুন্দরভাবে চলে, না ভেঙ্গে যায়। দলটাকে ছোট করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে আমি নিজেই দলে থাকব না। কেন আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। এটা আমি একটা টেলিভিশনকে বলেছিলাম, এ জন্য আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে করছি।
আগামীতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে না পারলে অন্য কোন দলেও যাব না উল্লেখ করে রাঙ্গা বলেন, আমি আজ এখানে পার্টির কোন লোক নিয়ে আসিনি। পরিবহন সেক্টরের কিছু লোক এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন জোট করে নির্বাচন করিনি। তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু আসন ভাগাভাগি হয়েছে। এখন জাতীয় পার্টি কোন জোটে যাবে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে, সেটা দলের প্রেসিডিয়াম সভা ঠিক করবে।
সংগঠনবিরোধী কাজের জন্য রাঙ্গাকে অব্যাহতি- চুন্নু ॥ প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ জাতীয় পার্টির (জাপা) সব পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জন্য রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এক বছর ধরেই তিনি পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংসহ বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। রাঙ্গার কার্যকলাপ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। বৃহস্পতিবার দলটির বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি কারোর দালাল নয়, কারোর পকেটে নেই। দেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে চায়। আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি। মানুষের মন জয় করে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে। তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংয়ে এজেন্ডা ছিল সংসদে বিরোধী দলের নেতা প্রসঙ্গে। ২৪ জনের (সংসদ সদস্য) অনুমতি নিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা পরিবর্তনের কাগজ স্পীকারের কাছে হস্তান্তর করা নিয়ে আলোচনা হয়। এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।
জাতীয় পার্টির শক্তি বেড়েছে দাবি করে চুন্নু বলেন, দল থেকে কেউ চলে গেলেও জাতীয় পার্টি থাকবে। দল দলের জায়গায় থাকবে। দল ভাঙবে না। রওশন এরশাদকে দলের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি। রওশন এরশাদই জিএম কাদেরকে দায়িত্ব নিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংয়ে এজেন্ডা ছিল সংসদে বিরোধী দলের নেতা প্রসঙ্গে। ২৪ জনের (সংসদ সদস্য) অনুমতি নিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা পরিবর্তনের কাগজ স্পীকারের কাছে হস্তান্তর করা নিয়ে আলোচনা হয়। এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।