
গত ১৩ জুন ইরানের রাজধানী তেহরানে আকাশপথে ইসরাইল একাধিক হামলা চালিয়েছিল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ জানিয়েছেন, ইরানে ‘অগ্রিম প্রতিরোধমূলক’ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই অভিযানের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতা। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, ইরানে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত নয়। তবে ওয়াশিংটনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে ইসরাইলের পাশে সামরিকভাবে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন। ইরানে আগ্রাসন চালানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে ইসরাইল বলেছিল, দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় তারা দেশটিতে অগ্রিম হামলা চালিয়েছে। অথচ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কখনই এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য কাজ করছে। আমরা এ বিষয়টি ইসরাইলি নেতৃত্বকে বহুবার জানিয়েছি। তিন আরও বলেন, ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি উন্নয়নে সহায়তা করতে রাশিয়া প্রস্তুত। ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালানোর অধিকার রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে ট্রাম্পের প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সংঘাতে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি সত্যিকারের ঝুঁকি রয়েছে। তাই তিনি সব পক্ষকে একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে অনুরোধ করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে ইরানের এবং আমার নিকট মনে হয়, এটিই এই সমস্যা সমাধানের পথ। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক আলোচনার ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরাইলের হামলার লক্ষ্য হলো আলোচনাকে নস্যাতের চেষ্টা। ইসরাইলি হামলাকে তিনি সরাসরি ডাকাতি উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করেন যে, দেশটি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নেতানিয়াহু সরকার প্রমাণ করছে, তারা এই অঞ্চলে শান্তির পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ইরানের জনগণের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান নিজেকে রক্ষা করছে। চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ইরানের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্ভূত বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের
জন্য একটি আশাব্যঞ্জক চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৫ জুন দেখা করার কথা ছিল। এর আগেই ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এটি ছিল কূটনীতির বিশ^াসঘাতকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভিত্তির ওপর এক নজিরবিহীন আঘাত। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় জাতিসংঘভিত্তিক সমগ্র আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রুশ প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখে এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরমপন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে; তাতে তারা এক ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা অবিলম্বে উত্তেজনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে সতর্ক করেছে যে, এর ভয়াবহ বৈশি^ক পরিণতি হতে পারে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা অবিলম্বে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যা উত্তেজনা কমাবে। এই অঞ্চলকে আরও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেওয়া থেকে রক্ষা করবে। একইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে পৌঁছানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে। এই উত্তেজনা কমানোর প্রক্রিয়ায় চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গত ২০ জুন সেন্ট পিটার্স বার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের মূল অধিবেশনের ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ^কে তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, এ দুটি অঞ্চল এখন মারাত্মক সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিশ^জুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বৈশি^ক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। সকল সংকটেরই শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। ইরান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসরাইল যদি সত্যিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সংগঠনটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে অব্যাহত সংঘাতের ফলে বিশ^ একটি সংকটের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। এই সংঘাতের বিস্তার হলে যে আগুন জ¦লবে, তা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, তিনি বিশ^াস করেন, এই সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে ‘পারমাণবিক প্রশ্ন’। তিনি বলেন, ইরান বারবার বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র চাইছে না। আসুন আমরা স্বীকার করি, এখানে আস্থার অভাব রয়েছে। সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধানে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। ইরানে ইসরাইলি হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা যখন জোর আহ্বান জানাচ্ছেন, সেই সময় ট্রাম্প ইসরাইলকে হামলা বন্ধ করতে বলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে ইরানের ফোরদা, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১০ দিন ধরে চলমান ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ল। অথচ এই যুদ্ধ বন্ধ করা ও ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সুযোগ দিয়ে ট্রাম্প ১৫ দিন সময় নিয়েছিলেন। এই ঘোষণার ৩দিন পার হওয়ার পূর্বেই ইরানে হামলা করে বসে যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনায় আইএইএকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান মোহাম্মদ এসলামি এ বিষয়ে চিঠি প্রদান করেন। এর আগে ইরানের উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সাউদ খতিবজাদে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ মানে পুরো অঞ্চলেই নরক নেমে আসা। এই যুদ্ধ যদি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে বৈশি^ক রূপ পরিগ্রহ করে, তাহলে এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশে^র নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার ঘটনায় ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দাবি করে, এই হামলা যুদ্ধের পরিণতির সূচনা এবং এটি কোনো বিচ্ছিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ইরানের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে। ইরানের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, একটি জীবাণু গবেষা কেন্দ্র, সরবরাহ ঘাঁটি, একাধিক কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এছাড়াও তেলআবিব, নেস সিয়োনা ও হাইফার আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। নেস সিয়োনার জীবাণু গবেষণা কেন্দ্র; যা নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছিল, এবার সেটি ইরানের সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হলো।
ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানকে এখন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি তারা না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় হামলার মুখোমুখি হতে হবে। ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালানো ইরান বলছে, এটি একটি আগ্রাসী যুদ্ধ এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এমতাবস্থায় আরও বৃহত্তর পরিসরে সংঘাত শুরু হবে। কারণ ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা আঞ্চলিক মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালাবে। এতে ইরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোও জড়াতে পারে। গত ২০ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরান ও ইসরাইল তাদের মিত্রদের নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দায় চাপাতে থাকে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা আছেÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির এ দাবি ‘ভিত্তিহীন গুজব’। তিনি পশ্চিম শক্তিগুলোকে ইসরাইলি আগ্রাসনের সহযোগী ও ভয়াবহ অস্ত্রের মতোই বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেন। গত ২১ জুন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বৈঠকে এরদোগান ইরানের প্রতি সমর্থন জানান। ওই বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির মধ্যে বৈঠকে ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারবে না বলে একমত হয়েছেন। ল্যামি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক উল্লেখ করে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জও বলেছেন, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে না। ইরানের সামরিক পরমাণু কর্মসূচি থামাতে কূটনৈতিক সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকেও তিনি সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে তিনটি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছেন। এই যুদ্ধ আরও বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। ট্রাম্প নিজেও এই আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে এই সংঘাতে যুক্ত হয়, তাহলে তারা যে ক্ষতির মুখে পতিত হবে, তা কখনই পূরণ করার নয়।
এদিকে ইরান বিশ^বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে রয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টের ভোটে এই প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এটি ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত এবং এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরকে সংযুক্ত করেছে। ইরান অতীতে বেশ কয়েকবার এ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিলেও কখনই তা কার্যকর করেনি। বিশে^র মোট জ¦ালানি তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালি দিয়েই পরিবহন করা হয়। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর চাপ দূরে ঠেলে রাখতে ইরান বরাবরই প্রণালিটি বন্ধের হুমকি প্রদান করে। প্রণালিটি বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। এই প্রণালি বন্ধ হলে বিশ^বাজারে জ¦ালানির দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং বৈশি^ক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি চীন সরকারকে উৎসাহিত করব যাতে তারা ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ তারা তেলের জন্য হরমুজ প্রণালির ওপর নির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে তা হবে আরেক বড় ভুল। এটি হবে তাদের অর্থনৈতিক আত্মহননের শামিল। আমাদের ওই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিকল্প পথ হাতে রয়েছে। তবে অন্য দেশগুলোও সেসব বিকল্প পথের অনুসন্ধান করবে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে আমাদের চেয়ে অন্যদেশগুলোর অর্থনীতি অনেক বেশি খারাপ অবস্থায় পতিত হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই প্রণালি বন্ধের পদক্ষেপে উত্তেজনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশগুলোও এর জবাব দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হবে। জাতিসংঘের প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ এর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। দেশটির পার্লামেন্টে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরাইল ও ইরান একটি সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই সমঝোতা দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্বের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটাবে। তিনি এই সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, এটি এমনি একটি যুদ্ধ যা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি এবং আর কখনো হবে না। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা পূর্বেই ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি কাতারের আল উদেইদেতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ট্রাম্প একে অবশ্য খুব দুর্বল হামলা বলে অভিহিত করেছেন। ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণাত্মক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় ওই হামলা চালানো হয়েছে কাতারে। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় যদিও উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহ সংঘাতের পর ট্রাম্পের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধবিতি শুরু করেছে। যুদ্ধ কখনই শান্তি বয়ে আনে না। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ীভাবে কার্যকর হোক।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল