ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

নদীভাঙনে দিশাহারা জনজীবন

জাহিদুল ইসলাম, মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ২০:১১, ২৭ জুন ২০২৫

নদীভাঙনে দিশাহারা জনজীবন

নদী কখনো জীবন দেয়, আবার কখনো কেড়ে নেয় সবকিছু। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সুলতানি গ্রাম যেন আজ নদীর তীব্র প্রতিহিংসার শিকার। গত কয়েক বছরে যেভাবে মেঘনা নদী এ এলাকার মানুষজনের বসতভিটা, শস্যক্ষেত ও আশা-ভরসা গ্রাস করে নিচ্ছে, তা এক হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি। অথচ উন্নয়নের ভাষণে ভরা দেশে এই প্রান্তিক মানুষের আর্তনাদ যেন কেউ শুনছে না। আমি নিজে যখন এলাকাটিতে যাই, দেখতে পাই- নদীর কিনারে বসবাসকারী বৃদ্ধরা চোখের জলে বলছেন, ‘এইখানে জন্ম, এইখানে মা-বাবার কবর ছিল, এখন নদীর পেটের ভিতরে।’ এই ‘ছিল’ শব্দটা যেন আজ সুলতানির মানুষের অভিধানে ভয়ংকরভাবে বারবার ফিরে আসে। ঘর ছিল, জমি ছিল, স্কুল ছিল- সব ছিল, এখন শুধু নদী।
বসতভিটা বিলীন, ভাঙনের মুখে কবরস্থান প্রায় ৫০টির বেশি পরিবার ইতোমধ্যে ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়ের বাড়ি, মসজিদের বারান্দা কিংবা খোলা মাঠে। অনেকের পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো- এলাকার পুরানো কবরস্থান, স্কুলও আজ নদীর ভাঙনের মুখে। যেকোনো সময় তা বিলীন হয়ে যেতে পারে। শিক্ষা ও জীবিকা চরম সংকটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিল, ‘আমাদের স্কুলও নদী ভাঙনের পাশে। আব্বু বলে, আর কদিন পর পড়তেও পারব না।’ এই একটিমাত্র বক্তব্যই যথেষ্ট বোঝাতে। নদীভাঙন এখানে শুধু ঘর-বাড়ি নয়, প্রজন্মের ভবিষ্যৎকেও খেয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কেবল ‘আশ্বাস’ দেন এলাকাবাসীর অভিযোগ- বছরের পর বছর ধরে জনপ্রতিনিধিরা কেবল মাপজোখ আর প্রকল্প পাঠানোর কথা বলে যাচ্ছেন। বাস্তবায়নের নামগন্ধ নেই। কিছু কাজ হলেও তা আশানুরূপ নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন- সবাই যেন ‘ফাইলপত্রে দায় সারছেন’। অথচ ভাঙনের গতি এখনই থামানো না গেলে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।
আমরা চাই টেকসই প্রতিরোধ, প্রতিকার নয় পূর্ব সুলতানির মানুষ এখন আর অস্থায়ী ত্রাণ বা চাল চায় না। তারা চায় স্থায়ী নদীশাসন ও রক্ষা বাঁধ, যেন আগামী প্রজন্ম এই ভিটেমাটিতেই মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি- এই অবহেলিত জনপদের প্রতি রাষ্ট্র যেন তার দায়িত্ব পালন করে। এই নদীভাঙন শুধু সুলতানির সংকট নয়, এটি একটি জাতির প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্ব সংকটের প্রতিচ্ছবি। এখনই সময়- এই আর্তনাদ শোনার, কাজ করার।

জাহিদুল ইসলাম, মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল

প্যানেল

×