ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

প্রকল্পে বেশি দুর্নীতি

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২৭ জুন ২০২৫

প্রকল্পে বেশি দুর্নীতি

বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি থেকে সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হওয়া পর্যন্ত পুরো পদ্ধতির মধ্যে বহু জায়গায় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে। এর মধ্যে কিছু ইচ্ছাকৃত ত্রুটি, অন্যটি কাঠামোগত ত্রুটি। প্রকল্পের কাজের দরপত্রেও বড় অনিয়ম হয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, যতটা না জাতীয় স্বার্থে প্রকল্প হাতে নেয়, তার চেয়ে বেশি মনোনিবেশ করে রাজনৈতিক স্বার্থে। 
স্বাধীনতার পর যুগ যুগ ধরে এমনটিই চলছে বাংলাদেশে, যেন দেখার কেউ নেই। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতা চিরতরে বন্ধে কঠোর জবাবদিহিমূলক আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। আগামী দিনে যেন জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো প্রকল্প কেউ প্রণয়ন করতে না পারে।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার প্রণীত প্রায় সকল প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদাররা আত্মগোপনে কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যমান অধিকাংশ প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় কাটছাঁট করে ছোট করা হয়েছে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে প্রকল্প প্রণয়ন পদ্ধতির মধ্যে বহু জায়গায় ত্রুটি রয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি প্রকল্পের সব ক’টি ধাপের নথি অনলাইনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যদিও সরকারের কোনো কোনো আমলা মনে করেন গোপন কিছু আছে। তবে বলতেই হয়, সরিষার মধ্যে ভূত আছে।
গত এক দশকে যতগুলো মহাসড়কের কাজ হয়েছে, সেগুলোতে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান ক্রমাগতভাবে দরপত্র পেয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, নৌপরিবহনসহ অন্যান্য খাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, দরপত্র পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল, যা এখনো আছে। পর্যালোচনায় ত্রুটির কারণে বাংলাদেশে দরপত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও অপচয় হয়। এসব দুর্নীতির পথ বন্ধে কাজ করছে বর্তমান সরকার। সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একটি চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি কিছু বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকে একত্র করে বলেছেন, তোমরা মান ও পদের দিক থেকে কে কোথায় আছো তা ভুলে যাও। এরপর চলমান কিছু বড় প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিশ্লেষণ করো। কী করে এই প্রকল্পগুলো এত দুষ্ট প্রকল্প হয়ে গেল, এত দুর্নীতি কী করে হলো এবং এখনো হচ্ছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে বের করো। এরপর সেটিকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে সে আলোকে কিছু নিয়মনীতি করা যায় কিনা, তোমরা প্রস্তাব করো। তার আলোকে কিছু রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস তৈরি করা হবে।
বাংলাদেশের সনাতনি পদ্ধতির প্রকল্পগুলোয় অপচয় রোধে, প্রকল্পের গলায় রশি বাঁধতে এমন উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংস্কার কার্যক্রম, আগামী দিনের নির্বাচিত সরকার সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার হয়তো এই নিয়মগুলো বদলাবে না জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। এভাবে সরকারের পরিচালনা ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব। ভুলে গেলে চলবে না দেশটা আমাদের সবার। অংশীজনদের সম্মিলিত প্রয়াসই পারে নতুন বাংলাদেশ গড়তে।

প্যানেল

×