ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা বিদ্রোহের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২৫ জুন ২০২৫

রোহিঙ্গা বিদ্রোহের আশঙ্কা

আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের উত্তরের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত রয়েছে, তার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থানে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করতে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে। কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে কয়েক বছর ধরে তারা রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল। আরাকান আর্মি, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় দেশজুড়ে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এ সময়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে, মিয়ানমারের অনেক সাধারণ নাগরিকের চোখে রোহিঙ্গাদের ‘ভুল’ পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং রোহিঙ্গাদের এই বিদ্রোহ মিয়ানমারে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ভয়াবহ ক্ষতি করবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ করে তুলবে।
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে এবং ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দলে টেনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছে। এতে জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। ফলে বাড়বে নিপীড়নের ঝুঁকি। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কী করা উচিত, সে বিষয়েও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনা এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপ জোরদার করা উচিত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আরাকান আর্মির উচিত এমন সব স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া, যার মাধ্যমে প্রমাণ হবে সব সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা তাদের আছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান হামলা আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনাকে দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বরং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব আরও প্রবল হতে পারে, যার প্রভাবে ১০ লাখ শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাখাইনে নিজেদের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বলে দাবি করে। তবে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে, বিশেষ করে খাদ্যসহায়তা হ্রাস পেলে শরণার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নেবে। তারা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে সুদূরপ্রসারী পরিকলপনা নিয়ে সামনে এগোতে হবে।

প্যানেল

×