ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারী বৃষ্টি ও বন্যার শঙ্কা

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৩০ মে ২০২৫

ভারী বৃষ্টি ও বন্যার শঙ্কা

বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বর্ষণ চলছে। নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। রাজধানীতেও প্রবল বৃষ্টি হয়। এ সময় রেকর্ড করা হয় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। নিম্নচাপের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টির মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় অতিবর্ষণের কারণে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি শুক্রবার স্থল নিম্নচাপ আকারে ঢাকা ও এর আশপাশে ছিল। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিম্নচাপটির এ অবস্থানের কথা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।
তুমুল বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সংগত কারণেই নাগরিক ভোগান্তি চরমে ওঠে। দুর্বিপাকে পড়েন পথচলতি মানুষ। কিছু সড়কে কোমর সমান পানি জমে যায়। বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। জনকণ্ঠ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পুরো পাতা সচেতনতা ও সুপারিশধর্মী অভিমতও প্রকাশ করেছিল কয়েক বছর আগে। মুশকিল হলো পরিকল্পনা ও আন্তরিকতার অভাব থেকেই যাচ্ছে। ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নিয়ে আগে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) তৈরি করতে হবে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না করেই বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হচ্ছে। তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না ঢাকাবাসী। ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র মতে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি অন্তত ১২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিগত অর্থবছরে একই কাজের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বছর বছর এত টাকা খরচ করার পরও জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ছয় জেলার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সংবাদ পাওয়া গেছে। আজ শনিবারও অনেক নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ছয় জেলা হচ্ছে ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা।
বন্যার আশঙ্কা আছে, তাই নাগরিকদের পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশকিছু করণীয় রয়েছে। বাড়ির আশপাশে কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে এবং কোথায় মালমাল রাখবেন তা আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখুন যাতে বন্যার পানি বেড়ে গেলে মালামালসহ সহজে স্থানান্তর হওয়া যায়। গবাদিপ্রাণী মূল্যবান সম্পদ, এদের রক্ষার জন্য আগে থেকে উঁচু জায়গা কিংবা দুরবর্তী শুকনো জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। শুকনো খাবার, ফসলের বীজসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ রাখুন। এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করুন। বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন পুকুর, দিঘি, ঘেরের নিচু পাড়গুলো উঁচু করে দিন। সম্ভব হলে জাল দিয়ে ঘিরে দিন।
সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশে বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাস বন্যা স্বাভাবিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তরিকতা সক্ষমতা থাকাটাই প্রত্যাশিত। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব দুর্যোগ কাটিয়ে মানুষ বাঁচুক এমনটাই প্রত্যাশা।

প্যানেল

×