সম্পাদকীয়
সুনীল জলরাশির সমুদ্র তীরবর্তী মনোরম ও সুদৃশ্য শহর ফ্রান্সের কান। সেই কানে গত ১৩ মে বসেছিল বিশ্ব সিনেমার ভিন্নরকম মর্যাদাপূর্ণ উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। টানা ১৪ দিনের এই আয়োজনে লালগালিচা, ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারসহ পরিপূর্ণ ছিল রাজনৈতিক বার্তায়। আর সেটি হলো ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন। উদ্বোধনের আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট চার শতাধিক ব্যক্তি গাজার চলমান ইসরাইলি বর্বরতা ও মানবিক সংকটের প্রতিবাদে স্বাক্ষর করেন একটি খোলা চিঠিতে। তদুপরি কানের ফটোসেশনে বিশ্বখ্যাত সাড়াজাগানো ব্যক্তি উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একটি টি-শার্ট পরেছিলেন, যেখানে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের নাম লেখা ছিল।
এর বাইরে যেটি বাংলাদেশের জন্য বহুল আলোচিত ঘটনা সেটি হলো কানের মতো মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশাল মেনশন সিনেমা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে আদনান আল রাজীব পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’। মাত্র ১৫ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটিকে মঞ্চে শর্ট ফিল্ম ও লা সিনেফ বিভাগের প্রধান বিচারক মারেন আবে স্পেশাল সেনশন যে তার ঘোষণা দেন। এর আগে ২০২২ সালে আঁ সার্তে রিপা বিভাগে ঠাঁই পেয়েছিল বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদেক পরিচালিত সিনেমা ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’। প্রশংসিত হলেও এটি অবশ্য কোনো পুরস্কার জিততে পারেনি। সেই প্রেক্ষাপটে আদনান আল রাজীব পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিচালিত ‘আলী’ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার দাবি রাখে। এর থেকে আরও একটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে, বাংলাদেশের বিশেষ করে শর্ট ফিল্মের ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নতি ও উত্তরণ ঘটেছে, যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
বৈশ্বিক চলচ্চিত্র মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত পুরস্কার অস্কার খুবই জাঁকজমকপূর্ণ এবং আড়ম্বরপূর্ণ হলেও রুচি ও নন্দনতাত্ত্বিক বিচারে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আলাদা ও অনন্য মর্যাদা রয়েছে। বিশেষ করে এর প্রথাবিরোধী অবিতর্কিত ও মানবিক আবেদনের জন্য। অবশ্য ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবেরও আলাদা সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। তবে ভেনিসের মঞ্চ থেকেই জন্ম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। ১৯৩৮ সালের জুলাইয়ে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ইতিহাসের কুখ্যাত একনায়ক জার্মানির হিটলার এবং ইতালির মুসোলিনি একমঞ্চে আবির্ভূত হলে, এর প্রতিবাদে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ফ্রান্সের কানে শুরু হয় কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।
এবারে কানের ৭৮তম আসর সমাপ্ত হয়েছে। বলা দরকার, ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস বা ফিপরেস্কি জিতেছিল বাংলাদেশের তারেক মাসুদ পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা ‘মাটির ময়না’। সব মিলিয়ে কানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি জায়গা করে নিয়েছে, যা অবশ্যই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য গৌরবের।
