
প্রতিবেশী ভারতের যে কোনো ঘটনাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিবেশী ভারতের যে কোনো ঘটনাই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ শাসনামলে গোটা এলাকাই ছিল একটি অভিন্ন রাষ্ট্র। স্বাধীন হওয়ার পর এই ভূখ- পাকিস্তানের অংশ হলেও প্রভুসুলভ মনোভাবের কারণে বাঙালি কখনো পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারেনি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের সফল নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ হয়, ফল হিসেবে ৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানার কারণে পাকিস্তানের দুই খ-ের বিরোধ চরমে ওঠে। জোর করে শাসনের চেষ্টা করা হলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং লুটপাটে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। সরাসরি সমর্থন, আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং মাতৃসুলভ আচরণে খুব অল্প সময়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে আনে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা।
কৃতজ্ঞতার রাখিবন্ধনে আবদ্ধ দুই প্রতিবেশীর একসঙ্গে পথচলা শুরু সেই থেকে। মাঝে-মধ্যে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মধ্যেও সেই বন্ধন আজও অটুট। দুই দেশের এই নিখাদ বন্ধুত্ব অনেকবার অনেক ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন যেমন ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তেমনি ভারতের নির্বাচনও বাংলাদেশীদের কাছে হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। নানা হিসাব-নিকাশে বাঙালি সমর্থনের দলটির পক্ষভুক্ত হয়ে যায়।
দীর্ঘ ৭৭ বছরের গণতান্ত্রিক ধারবাহিকতা ভারতের জাতীয় নির্বাচন এখন সারাবিশে^ একটি মডেল। এতটা লম্বা সময়ে ভারত প্রজাতন্ত্রের সরকার বারবার হোঁচট খেলেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়নি কখনো। গণতান্ত্রিক কৃষ্টির মূল তাই পৌঁছে গেছে অনেক গভীরে। বিভিন্ন সময় নির্বাচন নিয়ে কারচুপির ক্ষীণ অভিযোগ উঠলেও হালে পানি পায়নি কখনো।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক যুগের ব্যবধানে দু’বার ভারত সফরকালে দুটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার সুযোগ হয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের চিন্তায় থাকলেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো ভাবনাই নেই। দীর্ঘ ঐতিহ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যখন যে দলের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগই থাকে না। এক বা দেড় মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যালটগুলো জমা থাকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সকল এলাকায় নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সুবিধাজনক একটি সময় ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করা হয়। কমিশনের অধীনে থাকার সময় ব্যালট বাক্স পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ কখনো শোনা যায় না। নিরপেক্ষ আচরণকে নির্বাচন কমিশন তাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে। ভারতে নির্বাচনী ব্যবস্থা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেছে। যার ওপর প্রভাব বিস্তার করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
প্রতিবারের মতো এমন একটি কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। গত দুইবারের ক্ষমতাসীন বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে সরকার গঠন করছে। ভারতীয় লোকসভায় আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। এর মধ্যে ৫৪৩টি আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি আসনে মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ক্ষমতাসীন বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন। গত নির্বাচনে তাদের আসন ছিল ৩০৩টি, যা একক দল হিসেবে সরকার গঠনের যথেষ্ট ছিল। এবার তাদের নির্বাচনী জোট এনডিএর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। জোটের প্রধান দুই শরিক তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ১৬টি আসন এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জনতা দলের নীতিশ কুমার ১২টি আসন নিয়ে এনডিএ জোটকে সমর্থন জানিয়েছেন। সরকার গঠনে প্রয়োজন ২৭২টি আসন।
জোটে আরও রয়েছে শিব সেনার দুই গ্রুপের ১৫টি আসন। বিজেপির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী তাদের এনডিএ জোটের আসন দাঁড়িয়েছে ২৯৩টি।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পেয়েছে এককভাবে ৯৯টি আসন। গত নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৫২টি আসন। মোট আসনের দশ শতাংশ না হওয়ায় তারা বিগত জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারেননি। এবার তারা এককভাবেই বিরোধী দলের আসনে বসতে সক্ষম। কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত ইন্ডিয়া জোটের আসন দাঁড়িয়েছে ২৩২টি।
এই জোটে অন্যান্য দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসন পেয়েছে উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টি ৩৭টি আসন, পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, তামিলনাডুর ডিএমকে ২২টি। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ইন্ডিয়া জোটের কলেবর আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে তারা নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোটের ক্ষমতার আসন নড়িয়ে দিতে পারবে কি না তা সময়ই বলে দেবে।
ভোটের হিসাব যাই থাকুক আপাতত নরেন্দ্র মোদির জোট সরকারই ক্ষমতায় বসছে। আজ ৯ জুন রবিবার নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করবেন। তিনি হবেন ভারতের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ভারতে পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জওহর লাল নেহরু (১৯৫২, ১৯৫৭ ও ১৯৬২) এবং অটল বিহারী বাজপেয়ী (১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯)।
অটল বিহারী বাজপেয়ী অবশ্য পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র একবার। ইন্দিরা গান্ধী তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাঝখানে এক মেয়াদ বাদ দিয়ে (১৯৬৭, ১৯৭১ ও ১৯৮০)। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য গতকাল শনিবারই দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
বিশ^খ্যাত সংবাদ মাধ্যম বিবিসি অনলাইনের সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত তিনটি সরকারের আমলে যে দেশটির সঙ্গে তারা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে যারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সে দেশটি নিঃসন্দেহে ভারত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মেয়াদেও সেই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা ষোলো আনা। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতেও বাংলাদেশের গুরুত্ব বিগত দেড় দশকে ক্রমশ বেড়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবেও ভারত একাধিকবার বলেছে, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশই তাদের ‘সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী’। এই সময়ে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, কানেক্টিভিটি বা সংযোগ, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, স্থল ও সমুদ্রসীমায় বিরোধ নিরসন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ইত্যাদি ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনায় অভাবনীয় অগ্রগতিও লক্ষ্য করা গেছে।’
পর্যালোচনাটি লেখা হয়েছিল নির্বাচনের কয়েকমাস আগে। এতে আরও বলা হয়, ‘পর্যবেক্ষকরা আগামী নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকেই এগিয়ে রাখছেন। ফলে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদি ও ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকার বিগত এক দশকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে কাঠামোটা গড়ে তুলেছেন সেটা আরও অন্তত পাঁচ বছর অক্ষুণœ থাকবে বলে ধরেই নেওয়া যায়।
এর মধ্যে যেসব ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে তার মধ্যে রয়েছে গঙ্গার পানি চুক্তির নবায়ন (২০২৬ সালে চলতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে), তিস্তা চুক্তি, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, বাংলাদেশের নাজুক অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি।’ পর্যবেক্ষণে এসব ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টির আশঙ্কাও করা হয়েছে। বিশেষ করে অভিন্ন নদীগুলোর পানি চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে।
বিবিসির পর্যবেক্ষণ খুবই সময়োপযোগী, কিন্তু পুরোটা বাস্তবভিত্তিক নয়। গঙ্গার বর্তমান পানি চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে। চুক্তি অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত বৈঠক করছেন। মাঝে-মধ্যে তাদের মতে কিছু অমিল দেখা গেলেও চুক্তি বাতিলের পর্যায়ে যায়নি কখনো। ৩০ বছর ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ একটি চুক্তিকাল অতিক্রম করেছে।
বলা হচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বন্ধুপ্রতিম রাজ্য সরকার ছিল, তাই চুক্তি সহজ হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক কখনোই তৈরি হয়নি। তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। অদূর ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তি হবে না এটিও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব আসতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে এসেছেন, ‘আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে শুধু ভারত নয়, যে কোনো প্রতিবেশীকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’ এছাড়া বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে অনুমতি দিয়ে রেখেছে। মাতারবাড়ির ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম হবে না। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় এই আলোচনায় জটিলতা তৈরির কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কখনোই ভারতের নেতিবাচক ভূমিকা ছিল না। এর জবাবও এই নিবন্ধে দেওয়া হয়েছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব (ইকোনমিক রিলেশনস) এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো গভীর সংকট নেই যে, ভারতকে তাদের ‘বেইল আউট’ করার কোনো দরকার হবে।
প্রথম কথা হলো বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা নয়এ হ্যাঁ, কোভিড মহামারি বা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ভারত দেখছে না। আইএমএফ বা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির মতো সংস্থায় ভারতের প্রভাব খুবই বেশি। ফলে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের জন্য বাড়তি সময় দরকার হলে ভারত অবশ্যই সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।
বিবিসির পর্যবেক্ষণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে জটিল করে দেখা হয়েছে। শুধু বিবিসি নয়, আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বী কিছু ব্যক্তি, এমনকি আওয়ামী লীগের সুবিধাবঞ্চিত কিছু মানুষও বিষয়টি জটিল বলে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি শুধু এখনই নয়, বিগত দশ বছর ধরেই চীন প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দুই দেশের সঙ্গে ‘ভারসাম্যের কূটনীতি’ বজায় রেখেছেন। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশে তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের স্বার্থের চেয়ে তাদের রাজনৈতিক ভাবনাই ছিল বেশি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বিবেচনায় প্রয়োজন থাকলেও বাংলাদেশ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেনি।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশ কখনো লুকোচুরির আশ্রয় নেয়নি। আর দশটা দেশের মতোই চীন বাংলাদেশের একটি বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগী দেশ। হয়তো তাদের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। চীন বাংলাদেশের পাশে থাকছে তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের চীনকে প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং প্রতিবেশী হিসেবে ভারত এই সত্য অবশ্যই বুঝতে পারছে না এমনটি নয়। বিবিসির পর্যবেক্ষণেই এর প্রমাণ রয়েছে। তাদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ ফরেন পলিসি এক্সপার্ট শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশকে যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই চলতে হবে এটা ভারত খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করে। চীনের মুখের ওপর সব দরজা বন্ধ করে দিতে হবে এ কথা কেউ বলছেও না।
কিন্তু বাংলাদেশে যদি চীন এমন কিছু করতে যায় যেটা ভারতের স্ট্র্যাটেজিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থকে সরাসরি হুমকিতে ফেলবে, ভারত অবশ্যই সেটা অ্যাড্রেস করতে চাইবে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশ কখনো চীনের এমন প্রস্তাবে রাজি হবে না যাতে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ হুমকির মুখে পড়বে।
শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা সরকার কখনো ভারতবিরোধী কার্যকলাপে কোনো শক্তিকে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করতে দেবে না। এই সত্য ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই প্রমাণিত হয়েছে। সরকার এই নীতি এখনো বজায়ে রেখেছে এবং ভারত এটা বিশ্বাসও করে। ফলে চীন যতই চেষ্টা করুক বাংলাদেশকে তারা ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারবে না।
উপরন্তু চীনের মতামত উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ‘কোয়াড’ জোটে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ মনে করেছে এই জোটে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন।
(আগামীকাল সমাপ্য)
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ