ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্য

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৫ মে ২০২৪

সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্য

.

সব ধরনের জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিরোধসহ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেসা সেন্টার। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অন্তর্ভুক্ত প্রধান প্রতিষ্ঠান নিয়ার ইস্ট সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর স্ট্যাটিজিক স্টাডিজের নেসা ৪৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এরূপ মন্তব্য করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান . হাসান আব্বাস বলেন, সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সন্ত্রাসবাদ চরমপন্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বর্তমান বিশ্বে কোনো একটি দেশের পক্ষে এককভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ। প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী প্রকট হলে সেটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের জন্যও হয়ে উঠতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে টেকসই মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন প্রত্যাশিত।

সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলা বিশেষ করে বান্দরবানের কিছু দুর্গম অঞ্চলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব পুলিশের চিরুনি অভিযানে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সন্ত্রাসী তরুণ। জামাতুন আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের নতুন একটি দুর্ধর্ষ প্রকৃতির জঙ্গি সংগঠনের সন্ধানও মিলেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বম সম্প্রদায়ের কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট  (কেএনএফ)-এর সন্ধানও পাওয়া গেছে, যারা নিজেরাই জঙ্গি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সর্বশেষ কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক লুটসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগও উঠেছে। ফলে, সেখানে চলছে চিরুনি অভিযান।

পুলিশ-র‌্যাব-কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদ দমনে অনেকাংশে সাফল্য এলেও তা একেবারে নির্মূল হয়েছে, এমন বলা যাবে না। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নব্য জেএমবি, আল্লার দল অথবা নতুন কোনো নামে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ধরপাকড়ের খবর আসে গণমাধ্যমে। তদুপরি জঙ্গিদের রয়েছে বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। অনেকেই বিশেষ করে তরুণরা ফেসবুক, ইউটিউব অথবা অন্য কোনো ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুপ্রাণিত উদ্বুদ্ধ হয় মৌলবাদী জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে। বাংলাদেশেও এদের অনুসারীদের সন্ধান মেলে। সে অবস্থায় কোনো তরুণ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গি বা উগ্রবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক মোটিভেশন অত্যাবশ্যক।

বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেজিরো টলারেন্সনীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোনো স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ জঙ্গি কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। আশার কথা এই যে, দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং পায়নি জনসমর্থন। তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদাই সতর্ক তৎপর থাকতে হবে। সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা জনপ্রতিরোধ।

×