ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান

রাশেদা খালেক

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান

.

জগৎ সংসারে বিজয় লক্ষ্মী নারী রয়েছেন বলেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী শুধু শক্তি প্রেরণাদাত্রী হিসেবেই কাজ করেনি, পুরুষের পাশাপাশি নারীর তরবারিও ঝলসে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের গর্ব অহংকারের শেষ নেই। মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের আপামর জনগণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শুধু পুরুষরাই করেনি, করেছে নারীরাও। কেউ অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছে, কেউ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রƒষা করে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, ভরসা দিয়েছে, মনোবল জুগিয়েছে, কেউ বর্হিবিশ্বে স্বাধীনতার সপক্ষে বিশ্বমত গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত থেকেছে। এমনিভাবে দেশের সকল মানুষ (শুধু কিছু সংখ্যক নরপশু আলবদর, আল শামস্ রাজাকার ছাড়া) প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদানকে কেবল বীরাঙ্গনা হিসাবে শহীদের মা-বোন-স্ত্রী হিসাবে দেখা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা কত লাখ লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে, নির্যাতিতা হয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রষা বা ভাত রেঁধে খাইয়েছেএভাবেই মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু কতজন নারী প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, কিভাবে যুদ্ধ করে শত্রুকে খতম করেছে, শহীদ হয়েছেন এসব প্রসঙ্গ খুব কমই আলোচনায় আসে। গবেষকরাও এদিকে খুব একটা নজর দেননি। তবে আশার কথা, বর্তমানেনারীমুক্তি যোদ্ধাদেরআবিষ্কার করার মহতী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে। এদিক থেকেসম্মিলিত নারী সমাজএবংমহিলা সমাজগৌরবময় ভূমিকা পালন করছে। পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনের দৌলতে আমরা কিছু নারীমুক্তি যোদ্ধাদের কথা জানতে পেরেছি স্বাধীনতার অনেক বছর পরও। এমন আরও কত নারী মুক্তিযোদ্ধা দেশের আনাচে-কানাচে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছেন, যাদের কথা আমরা এখনো জানতে পারিনি।

মুক্তিযুদ্ধে নারী সংগঠক হিসাবে কাজ করে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তারা হচ্ছেনÑ বেগম তাইবুন নাহার রশিদ, বেগম সাজেদা চৌধুরী, বেগম বদরুন্নেসা আহমদ, নূরজাহান মুরশিদ বেগম মতিয়া চৌধুরী। সহ-সংগঠক হিসাবে কাজ করেছেনÑ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বেগম সুফিয়া কামাল, . নীলিমা ইব্রাহিম, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বেগম রাফিয়া আক্তার ডলি, আইভি রহমান, অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম, বেগম হোসনে আরা মান্নান, মালেকা বেগম, আয়শা খানম, বেবী মওদুদ, মুশতারি শফি প্রমুখ নারী নেত্রীরা।

ভারতে অবস্থান করে এবং দেশের মধ্যে থেকে অস্ত্র চালনা শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে সেক্টরে এবং বিভিন্ন বাহিনীতে যুক্ত হয়ে বহু নারী বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। সেসব নারীর মধ্যে আদিবাসী নারীও রয়েছেন। তারাও দেশের সন্তান। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য জীবনপণ করে তারা লড়াই করে গেছেন। আদিবাসী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা খুব কমই শোনা যায়। কমই আলোচিত হয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী নারীদের রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। তাই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি কয়েকজন আদিবাসী নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা।

প্রথমেইকাঁকন বিবি কথা তুলে ধরছি। অসীম সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধাকাঁকন বিবি কাঁকন বিবি জাতে খাসিয়া। সুনামগঞ্জের মেয়ে। কাঁকন বিবি পাঁচ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। তখন সেখানকার কমান্ডার ছিলেন মীর শওকত আলী সাবসেক্টর কমান্ডার হেলাল উদ্দিন। কাঁকন বিবি প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচর্যার কাজ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, অস্ত্র, গুলি সংবাদ সরবরাহ করেন। ভিক্ষুকবেশে তিনি এই কাজ করতেন। আগস্ট মাসে জর্জিয়া ব্রিজ ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল কাঁকন বিবির। কাঁকন বিবি যুদ্ধ করেছেন মহরতপুর, কান্দাগাঁও, বসরাই, সেংরাটিলা, বেনিংগাও, নূরপুর, দোয়ারা বাজারে। ২০টি সম্মুখযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ডিসেম্বর মাসেবুদাইনামক এক রাজাকার তাকে ধরে ফেলে। শুরু হয় তার ওপর অত্যাচার। গরম লোহার রড দিয়ে ছিদ্র করা হয় দেহের নানা জায়গা। সাতদিন ধরে চলে এই নির্যাতন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার নাম করে শেষ পর্যন্ত কাঁকন বিবি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। নিজ এলাকায় তিনিমুক্তিযোদ্ধা বেটিনামে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের ছাব্বিশ বছর পর কাঁকন বিবি আবিষ্কৃত সংবর্ধিত হন। খাসিয়া নারী কাঁকেটের নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। কাঁকেট মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তিন মাস সেনাক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। দিনরাত তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চলে। এত পাশবিক অত্যাচার সইতে না পেরে সেনাক্যাম্পেই তার মৃত্যু ঘটে।

এবার বলব রাখাইন নারী প্রিনছা খে কথা। প্রিনছা খে মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে সেবিকার দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি পাকিস্তান বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। সহ্য করতে না পেরে গোপনে বিষ সংগ্রহ করেন। পাকিস্তানি সেনাদের খাবারে তা মিশিয়ে দিয়ে প্রিনছা খে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে মেরে ফেলেন। সারা বাংলাদেশে এমন অসংখ্য আদিবাসী নারী মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারিয়েছেন। কেউ কেউ অস্ত্র ধরেছেন পাকিস্তানি বর্বর পশুদের বিরুদ্ধে। আবার কেউ অসীম সাহসে বুক বেঁধে কৌশলে এই নরপশুদের খতম করেছেন। প্রিনছা খে তেমনি একজন সাহসী আদিবাসী নারী।

এবার বলব লড়াকু গারো নারী সন্ধ্যারানী সাংমার কথা। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর জানজালিয়া গ্রামে ১৯৫৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জমির মারাক। মাতার নাম মিংরি। বর্তমানে তিনি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নলচান্দ্রা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান সন্ধ্যারানী সাংমা মধুপুর জলছত্র মিশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে ভুটিয়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

পিতা ছিলেন কৃষক। মা আদিবাসী সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘরে কৃষি ক্ষেতে কাজ করতেন। সন্ধ্যারানী ১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহ হালুয়া ঘাটে জয় রামকুড়া খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন নার্সিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ থেকে হালুয়াঘাটের দিকে অগ্রসর হলে সন্ধ্যারানী সাংমা তার দূরসম্পর্কের এক বোন ভেরেনিকা সিমসাংয়ের সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জ থানার চাপাহাতি গ্রামে পৌঁছেন। সংবাদ শুনে হালুয়াঘাটের জয় রামকুড়া নার্সিং হাসপাতালের ডাক্তার প্রেমাংকুর রায় সন্ধ্যারানী সাংমা ভেরেনিকা সিমসাংকে ১১নং সেক্টরের অধীনস্থ ফিল্ড নার্সিং হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এই হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন ১১নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন আব্দুল মান্নান ডাঃ প্রেমাংকুর রায়। হাসপাতালটির অবস্থান ছিল বাঘমারা ক্যাম্প থেকে চারশত গজ দূরে। সেই হাসপাতালে মেডিক্যাল সার্জারি ওয়ার্ডে প্রতিদিন রোগাক্রান্ত এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়া হতো। সন্ধারানী সাংমা সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জামালপুরে যান। সেখানে একটি রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ এবং তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। শেরপুরে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেন। এরপর জামালপুরে গিয়ে দুটি অপারেশনে সরাসরি অংশ নেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে জামালপুর হানাদার মুক্ত হয়। যুদ্ধকালীন প্রতিটি ক্ষণ ছিল সন্ধারানী সাংমার কাছে স্মরণীয়। একদিন বকশীগঞ্জের একটি মাঠে তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী হাসপাতালে সন্ধ্যারানী সাংমা, ডাক্তার প্রেমাংকুর রায়, ক্যাপটেন আব্দুল মান্নানসহ আট-দশজনের একটি টিম কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তাঁবুর পাশে পাকিস্তান বাহিনীর একটি শক্তিশালী বোমা বিকট শব্দে ফাটে। অল্পের জন্য সকলে রক্ষা পান। সন্ধ্যারানী সাংমা ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনা জেলার নলচাপা গ্রামের চার্চিল কুবিরকে বিয়ে করেন। তিনি দুই পুত্র এক কন্যা সন্তানের জননী। কমলাকান্দা এলাকায় তিনি একজন আদিবাসী নারীনেত্রী হিসাবে সুপরিচিত। সন্ধ্যারানী সাংমা মুক্তিযুদ্ধে গারো নারী হিসেবেঅনন্যাশীর্ষ দশ-২০০৮পুরস্কারে ভূষিত হন।

ভেরেনিকা সিমসাং টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার আমলীতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিশ্বনাথ চাম্বুগাং। মাতা কামিনী সিমাসাং। ভেরেনিকা ১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের জয় রামকুড়া খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালের নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী হালুয়াঘাটের দিকে অগ্রসর হলে ভেরেনিকা সিমসাং সন্ধ্যারানী সাংমা একই সঙ্গে মরিয়মনগর মিশনে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তারা চলে যান ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চাপাহাতি গ্রামে আত্মীয়ের বাসায়। খবর পেয়ে হালুয়াঘাটের জয় রামকুড়া খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালের ডাক্তার ফিল্ড নার্সিং হাসপাতালে তাদেরকে নিয়ে আসেন। ফিল্ড নার্সিং হাসপাতালটি ছিল বাঘমারা ক্যাম্পের অদূরে। এই হাসপাতালে ভেরেনিকা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভেরেনিকা তাদের মেডিক্যাল টিম শেরপুর এবং জামালপুরে প্রবেশ করেন। শেরপরে ২৯ দিন অবস্থান করে জামালপুরের বিভিন্ন যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেরেনিকা সিমসাং বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাপ্রদানরত অবস্থায় ডিসেম্বরে জামালপুর হানাদারমুক্ত হলে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় বাড়ি ফেরেন। ভেরেনিকা সিমসাং ১৯৭৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের বেড়িবাইদ গ্রামের খগেন্দ্র সাংমা ডিব্রাকে বিয়ে করেন। বৈবাহিক জীবনে তিনি দুই কন্যা এক পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন। ২০০৫ সালে ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয় (জনকণ্ঠ, ২১.১২.২০১৮)

মুক্তিযুদ্ধে দুইজন নারী ডা. সেতারা বেগম তারামন বিবিকেবীরপ্রতীকখেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৯৪ সালের ২৫ নভেম্বর ভোরের কাগজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে আমরা তারামন বিবির কথা জানতে পারি। তারামন বিবি বলেছেনÑ ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গেছি। কি পাব আর কি পাব না এই চিন্তা করে যুদ্ধে যাইনি। যুদ্ধ করেছি দেশের স্বাধীনতার জন্য।আমাদের মা-বোনেরা তথা নারী মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছেন কোনো পদক বা খেতাবের জন্য নয়। তারা লড়াই করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সালাম জানাই ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি। কৃতজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী দুই লক্ষাধিক সম্ভ্রমহারা মায়েদের প্রতি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক; চেয়ারম্যান,

ট্রাস্টি বোর্ড, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল

ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী

×