ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর বিড়ম্বনা

-

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৯ মার্চ ২০২৩

নারীর বিড়ম্বনা

সম্পাদকীয়

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া একটি দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রতিটি কর্মস্থলেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। তবে কর্মক্ষম নারীদের একটি বড় অংশ পথে ঘাটে অথবা অফিসে  নানাভাবে বুলিং-এর শিকার হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগেও পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে তেমন পরিবর্তন আসেনি। অন্যদিকে, প্রযুক্তি সেবা যেমন জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে কিছু বিড়ম্বনাও। মোবাইল ব্যবহারকারী এমন মেয়ে কমই পাওয়া যাবে যারা কোনো না কোনোভাবে উত্ত্যক্ত হয়নি। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ নারী দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাদের রয়েছে ফোন ব্যবহারজনিত গ্লানিকর বিড়ম্বনার কাহিনী।

বয়স কিংবা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে নারীকে প্রায়ই কম-বেশি অবাঞ্ছিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। ইউএনডিপি বাংলাদেশ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সিআরআইয়ের যৌথ এক জরিপে উঠে এসেছে দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় বাস-লঞ্চ-ট্রেনের যাত্রাপথে। প্রায় ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত এসব স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হন। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী দিনে হয়রানির শিকার হন। 
গণপরিবহনকেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ মনে করেন কর্মজীবীরা। অফিস ছুটির আগে ও পরে গণপরিবহনগুলো কর্মজীবী নারীদের নিতেও চায় না সহজে। যানবাহনে মেয়েদের সঙ্গে কোনো অসদাচরণ হলে তা বলাও যায় না। তখন শুনতে হয় নানা কথা। তাই নারী কর্মজীবীদের জন্য গণপরিবহনে যথাযথ নিরাপত্তা অথবা আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়। গত দুই বছরে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে (পিসিএসডব্লিউ) আসা অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২ বছরে ২১ হাজার ৯৪১ নারী হয়রানির অভিযোগ করেছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ হাজার ৮৮৯টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ গড়ে প্রতি মাসে ৭৮৯টি।
নারীর চলার পথ মসৃণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেই নৈতিকতা ভূলুণ্ঠিত হয় এক শ্রেণির পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির কাছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোংরা ভিডিও ছড়াতেও দ্বিধাবোধ করে না। অনেক মেয়ে না বুঝে প্রতারণার ফাঁদে আটকে পরে সর্বস্ব হারায়। পরিবার ও সমাজের কথা ভেবে তারা নিশ্চুপ থাকে। ফলে প্রতারকদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অসহায় নারীদের এরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বাইরেও পাচার করে দিচ্ছে।

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা সত্ত্বেও ফোনে যৌন হয়রানি হলেও এর প্রতিকার খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মাধ্যমে বেশি বেশি সতর্কতামূলক বার্তা প্রচার করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতির গতিময়তা বজায় রাখতে হলে নারীদের কর্মসংস্থানের হার বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের পারিপার্শি¦ক সকল সমস্যা নির্মূলে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
 

×