ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচার

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৮ মার্চ ২০২৩

যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচার

সম্পাদকীয়

একাত্তরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যে অপরাধটি ঘটেছিল সেটি কি কেবলই যুদ্ধাপরাধ? তা কিন্তু নয়, সেটি হলো গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। পৃথিবীতে এর তুল্য জঘন্য অপরাধের কথা আর জানা নেই। ১৯৭১ সালে নাগরিকত্ব, জাতীয়তা, বর্ণ ও ধর্ম পরিচয়ই যুদ্ধের অসহায় শিকারদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবেই বাঙালিদের নৃতাত্ত্বিক ও জাতিগত পরিচয়কে নিশানা করেছিল।

তাদের লক্ষ্য ছিল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাঙালিদের ধ্বংস করা। ধর্মের জন্য বিশেষভাবে নজর ছিল হিন্দু বাঙালিদের প্রতি। একাত্তরের অপরাধ ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন এবং ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্টে বর্ণিত গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে তা ভালোভাবেই মিলে যায়।
একাত্তরে সংঘটিত হয়েছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এর অর্থ হলো, ব্যাপক বিস্তৃতভাবে অথবা একটানা ও সংগঠিতভাবে কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর সচেতনভাবে আক্রমণ করা। মানবতার বিরদ্ধে অপরাধ হলো বড় আকারে নিরীহ বেসামরিক মানুষ হত্যা করা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে বড় আকারের আক্রমণ পরিচালনা ও অমানবিক কার্যকলাপ চালানো। ১৯৭১ সালে বেশির ভাগ আক্রান্ত ছিল নিরীহ জনসাধারণ। কোনো অবস্থাতেই বেসামরিক জনসাধারণকে আক্রমণ করা যেতে পারে না।
বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ১৩ বছরে ১৩৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে কোভিড-১৯ এবং বিচারক স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আপিলের শুনানি করছে না সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই ধরনের প্রায় ২৮টি আপিল বিচারাধীন। তা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধী সংগঠনসমূহের বিচার করতে না পারার দায় আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারব না। 
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও ছিল। পরে যুদ্ধাপরাধ মামলায় আপিলের সমান সুযোগ এবং ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের বিল সংসদে পাস হয়।

এরপর যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং প্রসিকিউশনের তদন্ত দল তাদের তদন্তও শেষ করে। কিন্তু কোনো দল বা সংগঠন যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত হলে তার শাস্তি কি হবে, তা আইনে না থাকার বিষয়টি উঠে এলে সাজা নির্দিষ্ট করতে আবার আইন সংশোধনের কথা ওঠে। এখানেই আটকে আছে জামায়াতে ইসলামীসহ যুদ্ধাপরাধী সংগঠনসমূহের বিচার। এটা খুবই হতাশাজনক যে, যুদ্ধাপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোর বিচারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। আর বিলম্ব নয়, যুদ্ধাপরাধী সংগঠনসমূহের বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করা চাই। এর মাধ্যমেই জাতিকে ঐতিহাসিক দায়ভার থেকে মুক্তি হতে হবে। 

×