ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের অভ্যুদয়

ওয়ালিউর রহমান

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২৫ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশের অভ্যুদয়

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, এতটা রক্তমাখা সূর্যোদয় হয়ত এদেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, এতটা রক্তমাখা সূর্যোদয় হয়ত এদেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু এ এক নতুন সূর্য। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূর্য। হাজার বছরের শৃঙ্খলমুক্তির জন্য রক্তস্নাত এক সূর্য উদিত হলো সেদিন বাংলার আকাশে। বাংলাদেশ তখন বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে।
মার্চের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য- যার নাম বাংলাদেশ। পাকিস্তানিরা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন। এজন্য ঐ দিন পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছিল ঢাকা আক্রমণের জন্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৫ মার্চ রাত ১২ টা ২০ মিনিটে (২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে) আনুষ্ঠানিকভাবে এক তারবার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তিনি। 
স্বাধীনতার আহ্বান বা ঘোষণা যে কেউ করতে পারে না। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেন এমন একজন মহান নেতা যিনি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে একটি জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। মানুষও এমন একজন নেতার আহ্বানে সর্বস্ব নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যিনি নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন।

আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমনই একজন বিশ্বনেতা যাঁর আহ্বানে সমস্ত বাঙালি এক হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতার জন্য। অনেক দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু এক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। অনেক দেশ পরাধীনতা থেকে বা কলোনি থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কোনো কোনো দেশ আলোচনার মাধ্যমে। আবার কোনো কোনো দেশ বিপক্ষ শক্তিকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাও যুদ্ধকালীন হয়েছে।

১৭৭৬ সালে ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয় এবং ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রণয়ন করা হয় সংবিধান। ইন্দোনেশিয়ার আহমেদ সুকর্ণ ডাচদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেরকম কোয়ামে এনক্রুমাহ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ঘানার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তানজিনিয়াও এভাবে স্বাধীন হয়েছে।
২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এম এ হান্নানসহ আরও কিছু আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন পর্যায়ক্রমে। পরে মেজর জিয়াকে জোর করে নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় আপনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক নন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে পাঠ করেন মাত্র।

বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন সে খবর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পেয়েছে। ডেভিড লোশাকের বই চধশরংঃধহ পৎরংরং-এ লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর কথা। বিএনপির অতি ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর সিদ্দিক সালিক ‘Witness to Surrender’ বইতেও জিয়াউর রহমানের কথা বলেনি, বলেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। তাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব কি বললেন এবং মির্জা আব্বাস সাহেব কি বললেন তা অপ্রাসঙ্গিক।
যারা জাতির পিতাকে বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে না, দেশের সংবিধানকে বিশ্বাস করে না, দেশের উন্নয়নকে অস্বীকার করে তারা যা কিছু বলুক না কেন সবই ভিত্তিহীন। 
বাংলার মানুষ স্বাধীনতাকে ও বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন দৃষ্টিতে কল্পনা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্বই দেননি, দিয়েছিলেন এর দর্শন ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপকল্প। প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যুদ্ধোত্তর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বর্তমানে সমগ্র বাঙালি জাতি এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এক ও অভিন্ন নাম।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সচিব

×