ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার কতটা নিরাপদ? আশীর্বাদ ও অভিশাপের দ্বৈরথ

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৩০ জুন ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার কতটা নিরাপদ? আশীর্বাদ ও অভিশাপের দ্বৈরথ

ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য এক অসাধারণ আশীর্বাদ, যা আমাদের জীবনকে নানাভাবে সহজ ও উন্নত করছে—স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পরিবহন, শিক্ষা থেকে বিনোদন—সবখানে AI তার ছাপ রাখছে। এটি আমাদের কাজকে আরও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে, যেমন স্বয়ংক্রিয় কারখানা বা ডেটা বিশ্লেষণে। আমরা যা দেখি, শুনি বা কিনি, তার সবকিছুই এখন AI দ্বারা ব্যক্তিগতকৃত হচ্ছে। এমনকি, AI এখন ছবি তৈরি, গান রচনা এবং লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজও করছে, যা মানুষের সৃজনশীলতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। তবে যেকোনো শক্তিশালী প্রযুক্তির মতোই, AI-এর ব্যবহার নিয়েও কিছু নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং নৈতিক প্রশ্ন রয়েছে। এর অসচেতন এবং অতিরিক্ত ব্যবহার যে আমাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হতে পারে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

AI-এর ব্যবহার ঘিরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। AI সিস্টেমগুলো বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে, যা সুরক্ষিত না থাকলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। যদি AI মডেলগুলো পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষিত হয়, তাহলে AI-এর সিদ্ধান্তও পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে, যা বৈষম্যমূলক আচরণ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, AI ব্যবহার করে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত মিথ্যা ছবি, ভিডিও বা অডিও তৈরি করা সম্ভব, যা ডিপফেক নামে পরিচিত; এটি ভুল তথ্য ছড়ানো, মানহানি বা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মতো গুরুতর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। AI সিস্টেম নিজেই হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে, যা গুরুতর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন একটি স্বায়ত্তশাসিত গাড়ির AI সিস্টেম হ্যাক হলে সেটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে, কিছু ক্ষেত্রে AI মানুষের কাজের সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে, যা সমাজে কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়াতে পারে।

প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, কিন্তু এর ব্যবহারকারীর সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি। AI-এর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। AI চালিত ডিভাইস এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়াতে পারে এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক দুর্বল করতে পারে। অ্যালগরিদম দ্বারা পরিচালিত ব্যক্তিগতকৃত বিষয়বস্তু ব্যবহারকারীদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। AI-এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ AI প্রায়শই সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ সরবরাহ করে। এছাড়াও, AI-এর সুবিধাগুলো সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায় না, ফলে যারা এই প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাদের সঙ্গে উন্নত দেশের মানুষের ডিজিটাল বিভাজন আরও বাড়তে পারে। মানব কল্যাণে AI-এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এর নিরাপদ এবং নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এই প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা কীভাবে মানিয়ে নিই এবং এর ক্ষমতাকে কীভাবে পরিচালনা করি, তার ওপরই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। AI কি সত্যিই আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে, নাকি অভিশাপ বয়ে আনবে? এর উত্তর আমাদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপরই নির্ভরশীল।

সাব্বির

×