ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার সিন্ডিকেট

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৫ মার্চ ২০২৩

ওয়াসার সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়

মানব জীবনে সুস্থ থাকতে বিশুদ্ধ খাবার পানির বিকল্প নেই। আমাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বর্জ্য নিষ্কাশন, খাবার হজম, রক্ত তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানি। সুস্থ জীবনের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশুদ্ধ খাবার পানির যোগান দিতে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ বা পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয় সেসব এলাকায় এই সমস্যা প্রকট। রাজধানীর এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় নি¤œ আয়ের মানুষদের।
ঢাকায় ২০ মিলিয়ন মানুষের প্রতিদিন প্রায় ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা। সরকারিভাবে রাজধানীবাসীর জন্য ‘বিশুদ্ধ পানি’ সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসা। বিপুল সংখ্যক মানুষের পানি সংকটকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার জোনগুলোতে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। দালাল এবং ওয়াসার কর্মীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেটের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, দালালদের মাধ্যমে না গেলে ওয়াসার গাড়ির পানি মেলে না।

ফলে বাধ্য হয়ে দালাল ধরতে হয়। দালালদের মাধ্যমে পানি পেতে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। আবার পানি  পাওয়ার পর ড্রাইভারকে দিতে হয় বকশিশ। অন্যথায় পরেরবার পানি পেতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। পানির গাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মধ্যে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও দালালদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। তাছাড়াও ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার পানি অস্বাস্থ্যকর, অনেক সময় দুর্গন্ধযুক্ত।

পানিতে মিশে থাকে বিষাক্ত কেমিক্যাল, ভারি ধাতু, মরিচা, সিসাসহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থ। পানি ফোটানোর পরও অনেক সময় তা পুরোপুরি দূষণমুক্ত হয় না। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য করছে। ঢাকা ওয়াসা প্রতিবছর নানা প্রকল্প গ্রহণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও রাজধানীবাসীকে না দিতে পেরেছে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি, না পেরেছে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে, না ঠিক করতে পেরেছে পয়ঃনিষ্কাশন।

ওয়াসার ৭৮ শতাংশ পানি তোলা হয় গভীর নলকূপ দিয়ে, বাকিটা নদীর পানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকাসহ আরও কিছু এলাকায় তা হচ্ছে না। ভূগর্ভের পানি শুধু কমছেই। অপরিকল্পিতভাবে নলকূপ বসিয়ে পানি অপচয়ের কারণে এখন বিশুদ্ধ পানি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্বের অনেক দেশেই পানির পরিকল্পিত ব্যবহারসহ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সমুদ্রের পানি ব্যবহারও সম্ভব হচ্ছে। পাশের দেশ ভারত বা শ্রীলঙ্কায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করা পানি সরাসরি কল থেকে পান করা গেলেও ঢাকাবাসীর জন্য তা যেন কল্পনাতীত। ২০৪১ সালে আমরা স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে সাধারণভাবেই মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে জীবনযাপনের মান কতটুকু উন্নত ও স্বস্তিদায়ক হলো, সেই বিষয়টিও আসবে। কাজেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

×